বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
সুকান্ত কলেজের সীমানা কখনো ছোঁয়নি। নানা কারণে, স্কুলের সীমানাও পার হতে পারেনি। আর পাঁচজনের মত স্কুলের পড়ায়, ওর তেমন মন ছিল না। স্বভাবতঃই অভিভাবকরা এতে অসন্তোষ প্রকাশ করতেন। ফলে, মাঝে মাঝেই দেখা দিত পারিবারিক অশান্তি। প্রায়ই সেসব কথা মায়ের কাছে এসে বলত ও হতাশ হয়ে যেত। তাই, যদিও তখন রাজনীতির নীতি ছিল, ভালো ছাত্রকর্মী হতে হলে; স্কুল-কলেজের লেখাপড়াতেও ভালো ছেলে হতে হবে- সুকান্তর বেলায় ঘটল ব্যাতিক্রম। কারণ আগেই বলেছি, উনি ছিলেন অসাধারণ। সৃষ্টির বেদনায়, অস্থিরতার লক্ষণ ও প্রকাশ সুস্পষ্ট। তাছাড়া তখনকার ছাত্র-আন্দোলনের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ ছিল সাংস্কৃতিক কার্যকলাপ। মার্কসবাদের প্রচার ও বিপ্লবী চেতনা সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে-একদিকে বিতর্ক, আলোচনা, শ্রেণী সংগ্রাম ও অপর দিকে গান, নাটক ও কবিতা-পাঠের আয়োজন ছিল প্রায়ই নিয়মিত।
সুকান্ত ছিল চল্লিশের যুগের কবি। তার অধিকাংশ ভালো কবিতাই লেখা ১৯৪১ থেকে ১৯৪৬- এর ভেতরে। তাঁর কবি জীবনের সবটাই কেটেছে কলকাতায়। কলকাতার আকাশে, তখন ঘন ঘন জাপানী বোমারু বিমানের আনাগোনা। দিনেও কলকাতা জনশূন্য। ভয়ে সব শব্দহীন। মাঝে মাঝে মিলিটারি গাড়ি বা বুটের শব্দ। বহু রাতের অন্ধকারে, সুকান্ত পথে বেরিয়েছে- কলকাতার এই প্রেতরূপ দেখবার জন্য। ১৯৪২- এর “ভারত ছাড়” সংগ্রামে ছাত্রসমাজের বীরত্ব ও ইংরেজ শাসকদের বর্বর অত্যাচর ও বীভৎস রূপ দেখে-সুকান্ত প্রতিশোধের শপথ নিলেন। ১৯৪৩-৪৪ এর দুর্ভিক্ষ মহামন্তর ও মহামারীর সময়- ক্ষুধার্ত শিশু ও যন্ত্রণাকাতর মায়েদের বুকফাটা কান্নার আওয়াজ তাকে পাগল করে দিত। আভিজাত্য ও জৌলুসের কেন্দ্রস্থল কলকাতার পথে-পথে তখন মৃত্যুর মিছিল। মহানগর মহাশ্মশানে পরিণত হলো। এই মৃত্যুর মিছিলের মাঝে সুকান্ত কাটাত সারাদিন সেবা ও সাহায্যের কাজে। এই মহান বিপ্লবী কবি ১৯৪৭ সনের ১৩ই মে সকলকে দু:খের সাগরে ভাসিয়ে মাত্র ২১ বছর বয়সে মৃত্যুর দেশে হারিয়ে গেলেন।
শাফায়েত জামিল রাজীব
সম্পাদক
একুশে টাইমস্ নিউজ মিডিয়া