মঙ্গলবার, ০১ Jul ২০২৫, ১১:৪৬ অপরাহ্ন
মাত্র পনের দিনের মধ্যেই টিটু’র ট্রেনিং দিয়ে হয়ে গেলো এক পুরোদস্তুর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা। কাজী কামাল, মানিক, সাদেক হোসেন খোকা, আজাদ, রুমিদের মতো বাঘা গেরিলাদের সাথে কয়েকটি অপারেশনে সাহসিকতার পরিচয় দিয়ে টিটোর উদ্যম আরো বেড়ে গেলো। কিন্তু ঢাকা সংলগ্ন ‘ডুবিব্রীজ অপারেশনে’ কমান্ডার মানিক নিহত হলে- টিটু’র আবারও মর্মাহত হয়ে গেলো। মনে পড়লো পাক হানাদার কর্তৃক নিহত ভাই ফুটবলার তেজোর কথা। টিটু’র কমান্ডার মানিকের রক্ত ছুঁয়ে শপথ করল- যতদিন পর্যন্ত দেশকে শত্রু মুক্ত করতে না পারব, ততদিন পর্যন্ত মায়ের সঙ্গে দেখা করব না। কিশোর টিটু’র সবচেয়ে প্রিয় মানুষ ছিলো তার মা। তাই মায়ের নামে কসম খেয়েছিল। দেশ শত্রু মুক্ত হয়েছিল কিন্তু টিটোর বাড়ি ফেরা হলো না। মায়ের মুখ দেখা হলো না।
যুদ্ধের নিষ্ঠুর পরিহাস। মুক্তির একদিন পূর্বে ঢাকা ঢোকার অন্যতম পথ আমিন বাজার ব্রীজটি কোন ক্রমেই মুক্তিযোদ্ধারা ক্রস করতে পারছিল না। রাজধানী ঢাকা জয়ের জন্য এটি ছিলো একটি বিরাট ট্রাজেডী। তাই এ বিষয়টির উপর নজর ছিলো বাঙালির সামরিক অফিসার মেজর জিয়া, মেজর শফিউল্লাহ ও ক্যাপ্টেন হায়দার প্রমুখ। উনারা মুক্তিযোদ্ধা নাসিরুদ্দিন ইউসুফের কাছে ম্যাসেজ পাঠালো, ব্রীজের অপর পাড়ে পাক হানাদারদের জনবল ও সামরিক শক্তি সম্পর্কে সোর্স মারফত খোঁজ নিতে। এবার বীরের দায়িত্ব নিলো টিটু’র। সাঁতরিয়ে নদী পাড় হলো; পাক হানাদারদের সকল খবরাখবর নিয়ে আমার বিপরীত পাড়ের সহযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছলো, বার্তা দিতে শুরু করল। এমনি এক ক্রান্তিলগ্নে পাক হানাদারদের একটি বুলেট পেছন দিক থেকে তার পিঠ ছেদ করে ঢুকে গেলো। রক্তাক্ত টিটু’র দেহ লুটিয়ে পড়ল নদীর কিনারায়। তখন টিটু’র মুক্তিযোদ্ধা রাইছুল ইসলাম আসাদকে দুই হাতে জড়িয়ে ধরে বলল “ভাই, আমার দেশ স্বাধীন হয়ে যাবে। আপনাদের কি মনে আছে? বিগ্রেডিয়ার খালেদ স্যার বলেছিলেন, ‘স্বাধীন দেশ কোন জীবিত গেরিলা যোদ্ধা চায় না।” মৃত্যুই গেরিলাদের সম্মান।’ তাই আজ আমি মৃত্যুর পথে। অত:পর চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মুক্তিবাহিনী তুমুল যুদ্ধের মাধ্যমে ব্রীজটি দখল করে। এবং সাভারের জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পার্শ্ববর্তী এলাকায় সামারিক মর্যাদায় টিটু’র লাশ দাফন করে। আজ আমরা বলব- কিশোর মুক্তিযোদ্ধা টিটো, তোমায় জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা।
শাফায়েত জামিল রাজীব
সম্পাদক
একুশে টাইমস্