বৃহস্পতিবার, ১৯ Jun ২০২৫, ০৫:১৭ পূর্বাহ্ন

যৌতুকের ক্ষতি ও ভয়াবহ পরিণাম

যৌতুকের ক্ষতি ও ভয়াবহ পরিণাম

বিয়ে করার সময় কিংবা এর আগে বা পরে বরপক্ষ জোরপূর্বক কনেপক্ষের কাছ থেকে যে অর্থ, স্বর্ণালংকার, জিনিসপত্র বা ফার্নিচার আদায় করে তা-ই যৌতুক। বরপক্ষ কর্তৃক কনেপক্ষের কাছে যৌতুক দাবি করা নিতান্ত অভদ্রতা, অসভ্যতা ও অমানবিক কাজ। যৌতুক দাবি করার কারণে কন্যাদায়গ্রস্ত বহু পিতা ও পরিবার অসহায়ত্বের শিকার হয়। গরিব ও দরিদ্র লোকদের বিবাহযোগ্য কন্যাদের বিয়ে এ কারণে বিলম্বিত হয়। অনেক সময় অভাবী পিতা যৌতুকের দাবি মেটানোর জন্য অন্যের কাছে হাত পাততে ও ভিক্ষাবৃত্তি করতে বাধ্য হয়। বহু নিরীহ স্ত্রী যৌতুক দিতে না পারার কারণে জোর-জুলুম, নির্যাতন, নিপীড়ন ও মারধরের সম্মুখীন হয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে যায়। কারো ওপর জোর-জুলুম করা বৈধ নয়। ঠিক তেমনিভাবে অন্যায়ভাবে কারো সম্পদ হরণ করাও অবৈধ ও নাজায়েজ। যৌতুক গ্রহণ করার ক্ষেত্রে যেহেতু বরপক্ষ কন্যাপক্ষের ওপর জোর-জুলুম করার মাধ্যমে তাদের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করে, তাই এটা শরিয়ত পরিপন্থী ও হারাম। অন্যায্যভাবে অন্যের সম্পদ উপভোগ করতে নিষেধ করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, ‘তোমরা অন্যায়ভাবে একে অপরের সম্পদ ভোগ করো না’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ৮৮)। অন্যত্র আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৯)
বিয়ে করার আগে বরপক্ষ কন্যাপক্ষের সহায়-সম্পত্তি, বংশ-ঐতিহ্য, রূপ-মাধুর্য ও ধার্মিকতার বিষয়টি যাচাই করা স্বাভাবিক। কিন্তু আজকাল সবকিছু ছাড়িয়ে বরপক্ষীয় বহু পরিবার কেবল কনেপক্ষের অর্থ-সম্পদের আধিক্য দেখে বিয়ে করা ও করানোর প্রতি উৎসাহিত হয়। কনেপক্ষের কাছ থেকে মোটা অংকের যৌতুক পাওয়ার নিশ্চয়তা পেলেই কেবল বিয়েতে সম্মত হয়; অন্যথায় পিছিয়ে যায়। মেয়ের পরিবারের কাছ থেকে মোটা অংকের যৌতুক গ্রহণ করার বিষয়টি বাহ্যিকভাবে উপকারী মনে হলেও বরপক্ষের জন্য পরিণামে তা ক্ষতিকর। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী সহায়-সম্পত্তির মোহে পড়ে বিয়ে করলে বর ক্ষতিগ্রস্ত হবে। পক্ষান্তরে ধার্মিকতার প্রাবল্য দেখে বিয়ে করলে সফল হবে। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, সাধারণত চারটি কারণে নারীদের বিয়ে করা হয়। তার সম্পদ, তার বংশমর্যাদা, তার সৌন্দর্য ও তার দ্বীনদারি। সুতরাং তুমি দ্বীনদার নারীকে বিয়ে করে সফল হও; নতুবা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫০৯০)
যৌতুক দেওয়া-নেওয়া হিন্দুয়ানি প্রথা ও সংস্কৃতি। হিন্দুধর্মে নারীদের জন্য উত্তরাধিকার-স্বত্ব স্বীকৃত নয় বলে বিয়ের সময় মেয়ে যা পায় তা-ই তার অর্জিত পৈতৃক সম্পত্তি। এ কারণে কনেপক্ষের কাছ থেকে যৌতুক গ্রহণ করার বিষয়টি হিন্দুদের মধ্যে স্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য। পক্ষান্তরে ইসলাম ধর্মে নারীদের উত্তরাধিকার-স্বত্ব স্বীকৃত। পিতার সম্পত্তি থেকে নারীরাও তাদের নির্ধারিত অংশ পায়। এজন্য যৌতুক নেওয়ার বিষয়টি ইসলামে সর্বাবস্থায় নিষিদ্ধ। মুসলমানরা যদি যৌতুক গ্রহণ করে, তাহলে তা হবে হিন্দুদের
সংস্কৃতির অনুসরণ ও বিজাতীয় সভ্যতার অনুকরণ। আর ইসলাম ধর্মে বিজাতীয় সভ্যতা-সংস্কৃতির অনুসরণ ও অনুকরণ নাজায়েজ ও হারাম। বিজাতীয় সভ্যতার অনুসরণ করতে হাদিস শরিফে কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে। হযরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
‘যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪০৩১)
যৌতুক আদায় করার জন্য বরপক্ষ কন্যাপক্ষকে নির্মমভাবে বাধ্য করে। যৌতুক প্রদান না করলে বিয়ে করা-করানো থেকে বিরত থাকে কিংবা স্ত্রীকে শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করে। আর বেআইনিভাবে কাউকে কোনো কিছু প্রদান করতে বাধ্য করা বা কারো সহায়-সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়া জুলুম ও হারাম। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘জুলুম কেয়ামতের দিন অনেক অন্ধকারের রূপ পরিগ্রহ করবে।’ (বুখারি, হাদিস : ২৪৪৭)
অবশ্য কনের পরিবার যদি মেয়ের প্রতি স্নেহের বশীভূত হয়ে তার বিয়েতে স্বেচ্ছায় কিছু উপহার প্রদান করে, তাহলে তা হালাল হবে ও কনে সেগুলোর মালিক হবে। কেননা সন্তুষ্টচিত্তে দেওয়া উপহার গ্রহণ করা হালাল। হজরত আবু হুররা রাকাশি (রা.) বলেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, কোনো মুসলমানের সম্পদ তার ভাইয়ের জন্য হালাল নয়, তবে স্বেচ্ছায় সে যা তাকে দান করে তার বিষয়টি ভিন্ন’ (বাইহাকি, হাদিস : ১৬৭৫৬)। তা ছাড়া হজরত ফাতেমা (রা.)-এর বিয়ের সময় মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে ব্যবহার করার জন্য বেশকিছু আসবাব উপহার দিয়েছিলেন।
এ হিসেবে কনের পিতা বা পরিবার যদি বিয়েতে তার মেয়েকে কিছু উপহার-উপঢৌকন দেয়, তাহলে সেগুলো গ্রহণ করতে শরিয়তের দৃষ্টিতে কোনো বাধা নেই। হজরত আলি (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতিমা (রা.)-কে একখানা চাদর, একটা পানির পাত্র ও একটা বালিশ উপহার দিয়েছিলেন যার ভিতরে ছিল ইযখির নামক তৃণ’ (নাসায়ি, হাদিস : ৩৩৮৪)। মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার ও আমল করার তাওফিক দিন।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana