শনিবার, ২১ Jun ২০২৫, ০৮:১৬ অপরাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার :
কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে জনপ্রিয় হচ্ছে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি। এ পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করতে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বেড়েই চলছে। যার ফলে সময় ও খরচ দুটিই কম লাগছে কৃষকদের। সুস্থ চারা উৎপাদনের নিশ্চয়তা ও চারা কোল্ড ইনজুরির ঝুঁকি নেই বলে কৃষি বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরিই বর্তমানে আদর্শ পদ্ধতি।
জানা যায়, ধানের চারা মূল জমিতে রোপণের পূর্বে যেখানে চারা উৎপাদন করে রোপণ উপযোগী করা হয় তাকেই বীজতলা বলা হয়। কৃষক তার পুরো জমিতে চারা রোপণের জন্য অল্প জায়গায় একসাথে ছিটিয়ে বীজ বপন করে বীজতলা তৈরি করেন। সনাতন এই পদ্ধতিতেই কৃষক বীজতলা তৈরি করে থাকেন। এই পদ্ধতির বীজতলায় বেশি পরিমাণে বীজ ব্যবহার করা হয় যার ফলে চারাগুলো লিকলিকে হয়ে সহজেই বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়। বর্তমানে কৃষি বিশেষজ্ঞরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পার্টনার প্রকল্পের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কমিউনিটি বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে।
সরজমিনে হোসেনপুর উপজেলার জগদল ব্লকের জগদল গ্রামে কৃষক মো. আরিফুল ইসলাম, মো. জলিল মিয়া, আশরাফুল, ফরিদ উদ্দিন, খোকন, পংকজ, কাঞ্চন মিয়ার সাথে কমিউনিটি বীজতলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্টনার, রাজস্ব ও বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলে ফসলের নিবিড়তা বিদ্ধকরণ প্রকল্পের আওতায় ডাহরা ও জগদল ব্লকের বিভিন্ন গ্রামের কৃষক আদর্শ বীজতলা/কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করছে। উপজেলা কৃষি অফিসার প্রশিক্ষণে জানতে পারি; বীজতলার চারপাশে ছয় ইঞ্চি গভীরতার ৫০ সেন্টিমিটার চওড়া করে নালা রেখে (১.০০-১.২৫) মিটার প্রস্থ ও ১০মিটার লম্বা বেড তৈরি করে দুই বেডের মাঝে ৩০ সেন্টিমিটার নালা রেখে প্রতি বর্গ মিটার বেডে ৮০ গ্রাম বীজ বপন করার পরামর্শ দেওয়া হয়। সে মোতাবেক আমরা সবাই মিলে এক সাথে কমিউনিটি বীজতলা তৈরি করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ওই এলাকার কৃষকরা বলেন, ‘কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজ বপন করলে ৫০-৬০ ভাগ বীজের অপচয় রোধ হয়। চারা সতেজ ও বলবান হয় এবং এই বীজতলা থেকে কম বয়সের চারা মূল জমিতে রোপণ করলে কুশি বেশি হয় ও উৎপাদন বেড়ে যায়। তাছাড়া এভাবে বীজতলা তৈরি করলে বীজতলার পরিচর্যা করা খুবই সহজ হয়। আমাদের নিয়মিত বীজতলা তৈরি করার বিষয়ে পরামর্শ দেন উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা মুদাসিল হায়দার আলমগীর। যার ফলে আমরা কৃষকরা কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির বিষয়টি অনুসরণ করে এই পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি করি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ এ,কে,এম,শাহজাহান কবির বলেন, এই উপজেলার পৌরসভাসহ ৬টি ইউনিয়নে কমিউনিটি ও আদর্শ বীজতলা স্থাপন করা হয়েছে। অন্যান্য কৃষকদেরকে উদ্ধুদ্বকরণের মাধ্যমে কমিউনিটি পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরির পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এতে প্রতি বিঘায় সাড়ে ছয় কেজি বীজ সাশ্রয় হয়। যা থেকে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় হবে। এছাড়াও এই পদ্ধতিতে বীজতলা করার সুবিধা হলো রাতের বেলা বেডে পানি দিয়ে দিনের বেলায় তা নিষ্কাশন করলে অধিক শীতের কারণে কোল্ড ইনজুরিতে ধানের চারা মরে যাওয়ার আশংকা কম থাকে। তাই এই উপজেলায় কমিউনিটি বীজতলা তৈরিতে কৃষকদের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলছে।