সোমবার, ২৩ Jun ২০২৫, ০২:০৭ পূর্বাহ্ন
মো. ইমরান হোসেন, কিশোরগঞ্জ:
রিমঝিম বর্ষা আর নিলীমার শরতের আলিঙ্গণে গ্রাম বাঙলার বিল-ঝিলে পদ্ম ফুল ফোটার সৌন্দর্য যেন এক প্রতিযোগিতার হাতছানি। কালের বিবর্তনে পালাক্রমে বিলুপ্তির পথে পদ্মবিলের পদ্মফুল। তাই এরই মাঝে সৌন্দর্যের অপরূপ সেজে প্রকৃতির ডাকে সারা ফেলেছে সিংরইল পদ্মবিলের পদ্মফুল। প্রকৃতির অপরূপ অলঙ্কার কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জের সিংরইল পদ্মবিল দেখতে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের ঢল নেমেছে। পদ্মবিল হয়ে ওঠেছে হাওর পর্যটনের বাড়তি এক মনোরম আকর্ষণ।
বন্ধু-বান্ধব ও আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে ডিঙি নৌকায় উঠে পদ্ম ফুলের আভায় নিজেদের রাঙিয়ে নিতে ঘুরে বেড়ানোর মজাই যেনো আলাদা। কখনও গুনগুন গান করে কিংবা কবিতা আবৃত্তি করে ক্ষণিকের জন্য নিজেদের আড়াল করে দেয়া হয় মনোমুগ্ধকর পরিবেশের চাদরে।
উপজেলার গুজাদিয়া ইউনিয়নের করাতি গ্রামের সিংরইল বিলে প্রতি বর্ষা শেষে শরতকে আলিঙ্গণ করে হাজারো গোলাপি পদ্মফুলের দেখা মিলে এই বিলে। আর সেই অপরূপ-নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দেখতে এ পদ্মবিলে ভিড় করেন দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন বয়সের কৌতূহলী নারী-পুরুষ। এ যেনো কিশোরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী হাওর পর্যটনের আরও এক নতুন আকর্ষণ।
প্রতি শুক্রবার ও শনিবার সরকারি ছুটির দিনসহ প্রায় প্রতিদিনই পদ্মফুলের ডগায় ভ্রমর, পাখি ও সাপের খেলা কিংবা জলজ উদ্ভিদের মাখামাখি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখতে সিংরইল পদ্মবিলে ভিড় করছেন প্রকৃতি প্রেমিক হাজারো নারী-পুরুষ। সারি সারি ডিঙি নৌকা নিয়ে এ বিল পাড়ে অপেক্ষায় থাকেন মাঝিরা। এক শ্রেণির শিশু-কিশোররাই ডিঙি নৌকা নিয়ে পারাপার এবং বিল ঘুরে দেখানোর কাজ করে বাড়তি উপার্জনের পথ বেছে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (০৪ সেপ্টেম্বর) বিকালে কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার করাতি গ্রামের সিংরইল পদ্মবিল সরেজমিন পরিদর্শন দেখা যায়, দেশের দূরদূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষের প্রাণের কোলাহলে ঘুরে বেড়ানোর যেন স্বাদ মিটেনা। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার মূহুর্তে সিংরইল পদ্মবিল ঘুরে অনেক পর্যটকরা জানান, এখানে পদ্মবিলের দৃশ্য যে এতোটাই মনোমুগ্ধকর তা আগে জানতাম না। ফেসবুকে দেখে ঠিকানা সংগ্রহ করে দেখতে এসেছি। পদ্মবিলটির সৌন্দর্য অনেক ভাল লেগেছে। আশা করি এখানে পর্যটকরা আসলে প্রশান্তি পাবে।
পরিবেশ রক্ষা সামাজিক আন্দোলনের বিশিষ্টকর্মী জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট মায়া ভৌমিক বললেন, বিল ঝিলের মতো প্রাকৃতিক জলাধার পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্যও খুব জরুরি। বর্ষা ও শরতে এসব বিল ঝিলে পদ্ম ও শাপলা ফুলের সমাহার প্রকৃতিকে মনোমুগ্ধকর করে তুলে। এইতো প্রকৃত অর্থে ষড়ঋতুর নদীমাতৃক দেশ বাঙলার চিরায়ত শ্বাশত রূপ।
করিমগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার বসু জানান, অসংখ্য ভ্রমণপিপাসু মানুষ মানসিক প্রশান্তি ও বিনোদনের জন্য পদ্মবিলের আঁকেবাঁকে সবুজের সমারোহ ও সৌন্দর্য উপভোগ নির্বিঘ্ন করতে স্থানীয় চেয়ারম্যানের সমন্বয়ে একটি মনিটরিং কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিলের প্রবেশ পথটি গতবছর সংস্কার করা হয়েছিল। ভবিষ্যতে পদ্মাবিলটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য আরও উপভোগ্য করতে সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।