চোখ আল্লাহর সূক্ষ্ম কারিগরির একটি নিদর্শন। মহান আল্লাহর এই অমূল্য নেয়ামতের পরিচর্যা করা সবার দায়িত্ব। চোখের উপকারার্থে রাতে শয়নকালে সুরমা ব্যবহার করা সুন্নত।
রাসুলুল্লাহ (সা.) নিয়মিত চোখে সুরমা ব্যবহার করতেন। চোখের যত্নে তিনি সুরমাকে এতটাই গুরুত্ব দিতেন যে, সাহাবায়ে কেরামকে তিনি এটি লাগানোর ব্যাপারে উৎসাহ দিতেন। সাহাবায়ে কেরাম ও তাবেয়ি ও ইমামদের মাঝেও সুরমা ব্যবহারের বেশ প্রচলন ছিল। এখনও শৌখিনরা সুরমা ব্যবহার করেন। তবে কেউ যদি কাজটি নবীজি করেছেন ভেবে করেন, তা হলে সৌন্দর্য ও শৌখিনতা হলেও সঙ্গে সুন্নতের সওয়াব আমলনামায় যুক্ত হবে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.)-এর একটি সুরমাদানি ছিল। তিনি প্রত্যেক রাতে (ঘুমানোর আগে) ডান চোখে তিনবার এবং বাম চোখে তিনবার সুরমা লাগাতেন।’ (সুনানুল কুবর লিল ইমাম বাইহাকি : ৮৫১৬)
সুরমা ব্যবহারের উপকারিতা বিজ্ঞানের গবেষণায়ও প্রমাণিত। হাদিস ও বিজ্ঞানের গবেষণায় সুরমা ব্যবহারে চোখের বড় উপকারিতাগুলো হলো-সুরমা চোখের জন্য ছোঁয়াচে সব ধরনের রোগ-জীবাণুকে ধ্বংস করে। চোখে প্রবেশ করা ধুলা ও ক্ষতিকর পদার্থগুলো নিঃসরণে কার্যকর ভূমিকা পালন করে। চোখের দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধক জীবাণুকে ধ্বংস করে। চোখে জ্বালাপোড়া নিরাময় করে। হজরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা শোয়ার সময় ‘ইসমিদ’ সুরমা ব্যবহার করবে। কারণ তা চোখের জ্যোতি বৃদ্ধি করে এবং অধিক পাপড়ি গজায়’ (ইবনে মাজাহ : ৩৪৯৬)। অন্য বর্ণনায় আছে, ‘এটি চোখের ময়লা দূর করে এবং চক্ষু পরিষ্কার করে।’ (তাবারানি : ৬৬৫)
চোখের পাপড়ি মানুষের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই করে না, ধুলাদূষণ ও বাতাস থেকে আমাদের চোখের সুরক্ষায় ঢাল হিসেবেও কাজ করে। অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ ও মানুষের মুখভঙ্গি বুঝতেও চোখের পাপড়ির প্রভাব রয়েছে। জার্নাল দ্য রয়াল সোসাইটি ইন্টারফেস সাময়িকীতে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদন মতে, বাতাসে মিশে থাকা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা, সংক্রামক জীবাণু, অণুজীব ছাঁকার কাজ করে চোখের পাপড়ি। এরপর ছাঁকনকৃত বাতাস চোখের ভেতর প্রবাহিত হতে সাহায্য করে। এ ছাড়া অক্ষিগোলকে মিউকাস, তেল ও পানির সংমিশ্রণে যে তরল প্রলেপ থাকে, সেটা শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে চোখের পাপড়ি। ফলে চোখ শুকিয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা পায়।