শুক্রবার, ২০ Jun ২০২৫, ০৭:০৩ অপরাহ্ন

নির্দলীয় সাংবাদিকতাই পারে বিভাজন দূর করতে

নির্দলীয় সাংবাদিকতাই পারে বিভাজন দূর করতে

একটা সময় ছিল যখন ছাপানো পত্রিকা পড়ার জন্য পাঠকরা ব্যাকুল হয়ে থাকত। দেশ ও দশের খবর জানার দুটি উপায় ছিল-এক রেডিও, দুই সংবাদপত্র। টেলিভিশন ছিল কেবল বিনোদনের যন্ত্র। টেলিভিশনের জনপ্রিয়তা হয়েছিল নাটক, গান, নাচ ও ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান প্রচারের মধ্য দিয়ে। কিন্তু খবরের কাগজ বা পত্রিকা পকেটের টাকা দিয়ে কিনে পাঠক পড়ত। খবরাখবর জানত। পাড়ায়, মহল্লায় লাইব্রেরিতে পত্রিকা সংগ্রহ করা হতো। যেখানে দলবদ্ধভাবে খবর জানার ইচ্ছাটা দৃশ্যমান ছিল। কেউবা রাস্তার  বিক্রেতার কাছ থেকে পত্রিকা সংগ্রহ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে পত্রিকা পড়ে ফেলত।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির আধুনিক ছোঁয়ায় এমন দৃশ্য এখন খুব একটা চোখে পড়ে না। হাতের মোবাইল ডিভাইসে এখন সব দেখা যায়, পড়া যায়। পত্রিকার অনলাইন সংস্করণ পাঠকের ইচ্ছাকে হাতের মুঠোয় ভরে দিয়ে বিশাল পত্রিকাকে সংগ্রহ করে পড়ার আগ্রহকে হত্যা করেছে। আর কেনইবা পকেটের টাকা খরচ করে পত্রিকা কিনে পড়া। মোবাইল ডিভাইস তো ফ্রি পড়তে দিচ্ছে। এটা ঠিক যে, পত্রিকা কিনে পড়ার পাঠকের সংখ্যা দিন দিন কমলেও প্রতিনিয়ত নতুন নতুন পত্রিকা প্রকাশের অনুমতি পাচ্ছে। যদি হিসাব করা হয় যে, মোট কতটা দৈনিক, পাক্ষিক ও মাসিক পত্রিকা প্রকাশের বৈধ অনুমতি পেয়েছে, প্রকাশ হচ্ছে এবং তার সার্কুলেশন চিত্রটা কেমন, গুণগত অবস্থাইবা কেমন। তা হলে বিস্ময়কর কিংবা লজ্জাকর কোনো তথ্য পাওয়া যাবে বলে অনেকেই মনে করে। যত্রতত্র সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে পত্রিকা অফিসের অস্তিত্ব দেখানো হয়। কিন্তু আদতে এসব জায়গায় কী হয়, আর কেনইবা রেজিস্ট্রেশন নিয়ে এসব খোলা হলো, তার কোনো দেখভালের প্রয়োজন কোথাও আছে কি না, বোধ হয় কি না তা কেউ জানে না, জানতে পারে না। তবে এসবের পেছনে নিশ্চয়ই কোনো লক্ষ্য বা উদ্দেশ্য থাকে, যা সবাই জানতে পারে না।

যা হোক, প্রিন্টিং পত্রিকা পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়ার আরও একটি অন্যতম কারণ রয়েছে বলে অনেকেই মনে করে। একসময় ছিল যখন দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণেই সাংবাদিকতার পেশা নিবেদিত ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই মনোভাব বা দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে, পরিবর্তন এসেছে। প্রায় প্রতিটি পেশার ক্ষেত্রে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণবোধটা ধীরে ধীরে রাজনৈতিক সংগঠনের মধ্য দিয়ে প্রস্ফুটিত হতে শুরু করলেই এই পরিবর্তনের ধারা শুরু হয়। ফলে দেশ ও দেশের মানুষের কল্যাণের চেয়ে প্রায় সব ধরনের পেশাজীবীসহ সাংবাদিকতা পেশা বা সাংবাদিকদের কাছে রাজনৈতিক সংগঠনগুলোই মুখ্য হয়ে ওঠে। রাজনৈতিক দলের স্বার্থ উদ্ধারে সাংবাদিকরা বেশি মগ্ন, নিবেদিত। যেসব স্বার্থে আবার ব্যক্তির স্বার্থ সুপ্ত থাকে। খোঁজ করলে এমন অনেক সাংবাদিক পাওয়া যাবে যারা কোনো না কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এবং রাজনৈতিক ফায়দা ও সুবিধা নিতে সদা সক্রিয়। আর সেই কারণে সম্ভবত এক সময়কার ছাপোষা সাংবাদিকদের খেতাব পরিবর্তিত হয়েছে। সাংবাদিকতা পেশা মানেই হলো এখন ধনদৌলতে ভরপুর।
সোজাসাপ্টায়, প্রায় প্রতিটি পত্রিকাই কোনো না কোনো রাজনৈতিক দলের সমর্থনপুষ্ট হয়ে কাজ করে বলে সাধারণ পাঠকের ধারণা। ফলে নিরপেক্ষ ও প্রকৃত সংবাদ পরিবেশন করার সুযোগ আর থাকে না। সেদিকে অধিকাংশ সাংবাদিক হাঁটে না। হাঁটার সুযোগও নেই। সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে অতিরিক্ত মোহের কারণে। আবার পত্রিকার মালিক যারা, তারা কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি কিংবা গভীরভাবে সম্পৃক্ত হয়ে থাকেন। অরাজনৈতিক ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা এখন প্রায় দুর্লভ বিষয়।

নিজেদের দলীয় সংবাদ প্রচারের জন্য কোনো কোনো রাজনীতিকের নিজস্ব প্রকাশনা ও পত্রিকা থাকায় সাংবাদিকতার অতীত ঐতিহ্য, রূপ ও সৌন্দর্য খুঁজে পাওয়া যায় না। রাষ্ট্রের কল্যাণে ঐকমত্যে পৌঁছানোর জন্য সাংবাদিকতা এখন রাজনৈতিক সংগঠনগুলোকে প্রভাবিত করে না।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana