আল্লাহ তায়ালার আদেশ মান্য করা ও নিষেধ থেকে নিজেকে দূরে রাখার নামই ‘ইবাদত’। তবে সে ইবাদত হতে হবে খালেস নিয়তে আল্লাহর রাসুলের দেখানো পদ্ধতিতে। তবেই তা আল্লাহর কাছে কবুলযোগ্য হবে। নেক আমলের মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতে মহান আল্লাহর সাহায্য ও রহমত পাওয়া যেতে পারে। তবে মানুষের ভালো কাজগুলো কবুল হওয়ার জন্য কিছু মৌলিক শর্ত রয়েছে। নিম্নে তার কয়েকটি তুলে ধরা হলো।
ঈমান ও ইসলাম : ইবাদত কবুলের প্রথম মৌলিক শর্ত হলো বিশুদ্ধ ঈমান ও ইসলামের পূর্ণ অনুসরণ। মহান আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য দেওয়া এবং মহানবী (সা.)-কে আল্লাহর বান্দা ও রাসুল হিসেবে বিশ্বাস করা। যাদের আল্লাহ, রাসুল (সা.) তথা ইসলামের প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস নেই, পরকালে তাদের ভালো কাজের কোনো মূল্য নেই। পবিত্র কুরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর যারা কুফরি করে, তাদের আমলগুলো বালুময় মরুভূমির মরীচিকার মতো, পিপাসার্ত ব্যক্তি যাকে পানি মনে করে। অবশেষে যখন সে তার কাছে আসে, তখন সে দেখে সেটা কিছুই নয়। সে সেখানে পায় আল্লাহকে। অতঃপর আল্লাহ তার হিসাব পরিপূর্ণ করে দেন। আর আল্লাহ অতি দ্রুত হিসাব গ্রহণ করে থাকে’ (সুরা নুর : ৩৯)। এই আয়াত দ্বারা বোঝা যায়, ইবাদত কবুল হতে হলে অবশ্যই ইসলামের প্রতিটি ভিত্তির ওপর পূর্ণ বিশ্বাস থাকতে হবে।
খুলুসিয়াত বা ইখলাস : ইবাদত কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো নিঃশর্ত খুলুসিয়াত ও ইখলাস তথা একনিষ্ঠতা ও একাগ্রতা। এটা না থাকলে সেই আমল মূল্যহীন। পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমি তোমাদের মতোই একজন মানুষ। আমার কাছে ওহি প্রেরিত হয়েছে-তোমাদের মাবুদ এক। সুতরাং যে তাঁর রবের সাক্ষাৎ কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম করে এবং তাঁর রবের ইবাদতে কাউকে শরিক না করে।’ (সুরা কাহাফ : ১১০)
সুন্নতের অনুসরণ : ইবাদতে অবশ্যই নবীজি (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করতে হবে। নবীজি (সা.)-এর সুন্নতের পরিপন্থি কোনো পদ্ধতিতে আমল করার কোনো সুযোগ নেই। পবিত্র কুরআনে এ ব্যাপারে সতর্ক করতে গিয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘রাসুল তোমাদের জন্য যা কিছু নিয়ে এসেছেন তা গ্রহণ করো আর তোমাদের যা থেকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো, আল্লাহকে ভয় করো, আল্লাহ কঠিন শাস্তিদাতা’ (সুরা হাশর : ৭)। অতএব কোনো মুমিন যদি চায় যে তার আমলগুলো মহান আল্লাহর দরবারে কবুল হোক, তা হলে অবশ্যই আমলে নবীজি (সা.)-এর অনুসরণ করতে হবে।
শিরকমুক্ত জীবনযাপন : মহান আল্লাহর সঙ্গে বা তার কোনো সিফাতের সঙ্গে কাউকে বা কোনো শক্তিকে অংশীদার করলে সব ভালো আমল নষ্ট হয়ে যায়। তাই ইবাদতে কবুল করাতে চাইলে কোনো প্রকার শিরকের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা যাবে না। শিরকের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আমল কবুল হয় না। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আপনার প্রতি এবং আপনার পূর্ববর্তীদের প্রতি প্রত্যাদেশ হয়েছে, যদি আল্লাহর শরিক স্থির করেন, তবে আপনার আমল নিস্ফল হবে এবং আপনি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবেন।’ (সুরা জুমার : ৬৫)
হালাল উপার্জন করা : ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য হালাল উপার্জন অন্যতম পূর্বশর্ত। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত-রাসুল (সা.) বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা পবিত্র। তিনি শুধু পবিত্র বস্তুই গ্রহণ করেন।’ আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা পবিত্র বস্তু-সামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুজি হিসেবে দান করেছি।’ (মুসলিম : ২৩৯৩)