মঙ্গলবার, ২৪ Jun ২০২৫, ০১:২৮ অপরাহ্ন

কিশোরগঞ্জে ১০ মহরম পবিত্র আশুরা উপলক্ষে জারী তাজিয়া মিছিল 

কিশোরগঞ্জে ১০ মহরম পবিত্র আশুরা উপলক্ষে জারী তাজিয়া মিছিল 

আমিনুল হক সাদী,কিশোরগঞ্জ:
কিশোরগঞ্জে ১০ ই মহরম পবিত্র আশুরা পালিত হয়েছে।  সারাবিশ্বের সাথে কিশোরগঞ্জেও যথাযোগ্য মর্যাদায় পবিত্র আশুরার শোকানুষ্ঠান পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে শনিবার  জেলা সদরের ঐতিহাসিক বৌলাই পীর সাহেব বাড়ির মাজার ও দরবার শরীফ প্রাঙ্গনে দশ দিন ব্যাপি আয়োজন করা হয় কোরআন খানি, মিলাদ, মুর্ছিয়া জারির। আজ দশই মহররম আশুরার মাধ্যমে সকল আয়োজনের সমাপ্তি হয়। সারাদিন ব্যাপী অনুষ্ঠানে কারবালায় নির্মম ভাবে নিহত নবী (সাঃ) এর প্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইন (আঃ), নবী পরিবার ও সাহাবাদের স্বরণে আলোচনা করা হয়। সত্যে ও হকের পথ চিহ্নিত করার মানদন্ড কারবালা প্রান্তের এই নির্মম হত্যযজ্ঞের কাহীনি নিয়ে রচিত মুর্ছিয়া জারী পরিবেশন করা হয়। জারী পরিবেশন করে কিশোরগঞ্জ তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহের ঐতিহ্যবাহী ‘শানে পাঞ্জাতন মহররম জারী দল’। জারী শেষে মিলাদ, দোয়া তবারকের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করা হয়। মোনাজাত করেন জারীদল প্রতিষ্ঠাকারী সৈয়দ আঃ আউয়াল হোসাইনী চিশতী (চাঁনমিয়া)র ছোটোভাই বর্তমান গদীনিশিন পীর সৈয়দ নূরুল আউয়াল (তারামিয়া)। সার্বিক পরিচালনায় ছিলেন সৈয়দ ইয়াছিন।
কিশোরগঞ্জের সবচে বড় মহররমের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় অষ্ট্রগ্রামে। হাওর বেষ্টিত এলাকা অষ্টগ্রাম , পুরোনো জমিদার বাড়ী-‘হাওলী বাড়ী’ [হাবেলী বাড়ী] কে কেন্দ্র করেই পালিত মহরম । এই জমিদার পরিবারের একজন উত্তরাধিকারী আলাইমিয়া বা সৈয়দ আব্দুল করিমের সময় ১৮৩৬ সালে ইংরেজ সরকার বাকী খাজনার দায়ে জমিদারী বাজেয়াপ্ত করে । আলাই মিয়া তখন সংসার ত্যাগ করে বিবাগী হয়ে গিয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে সাধক হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছিলেন। সাধক খ্যাতি লাভের পর তিনি ফিরে এসেছিলেন জমিদার বাড়িতে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় স্থাপন করেছিলেন একটি ইমামবাড়া । সেই থেকে [আনুমানিক উনিশ শতকের মাঝামাঝি থেকে] অষ্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় মহরমের কেন্দ্র ‘হাওলী বাড়ী’ এখানে উল্লেখ থাকে যে, বর্তমানে অষ্টগ্রামে শিয়া সম্প্রদায়ের কেঊ নেই ।সুন্নী মুসলমানরাই তা পালন করেন । যেমনটি তারা করে আসছেন গত দেড়শত বছর ধরে । এবং এ অনুষ্ঠানে হিন্দুসহ অন্যান্য সম্প্রদায়ের লোকজনও অংশ গ্রহন করেন ।
মহরমের চাঁদ উঠার আগে থেকেই অষ্টগ্রাম ও আশেপাশের এলাকায় মহরম পালনের প্রস্তুতি গ্রহন করা হয় । শুধু তাই নয় প্রতিটি বাড়িতে সাধ্যমত চাল- চিড়া কুটে রাখা হয় । কারণ চাঁদ উঠার পর বারোদিন পর্যন্ত ঢেঁকিতে চাল কোট নিষিদ্ধ । মহরমের চাঁদ দেখার পর খাট-পালং কেঊ ব্যবহার করেন না, মাটিতেই আসন গ্রহন করেন বা শয্যা পাতেন । শুধু তাই নয় সে দিন থেকে তারা রোজা রাখেন । বয়স্ক পুরুষরা চুল দাড়ি ছাঁটেন না, বা কেঊ জুতো খড়ম পায়ে দেন না, নখ কাটেন না, ভালো পোষাক ও পরিধান করেন না । প্রতি রাতে সুর করে শুরু হয় জারি গান । গানের শেষ পর্যায়ে নিজ গ্রাম প্রদক্ষিন করে নিজ নিজ মহল্লা বা দরগার [ইমামবাড়া]সামনে এসে গান শেষ করেন। মূল অনুষ্ঠান অর্থাৎ আশুরার পূর্ব দিন পর্যন্ত এ ধরনের প্রস্তুতি চলতে থাকে । এ পর্যায়ে আরো আছে মাটি বা কাগজের ঘোড়া, তাজিয়া ইত্যাদি তৈরী ও শিরনী বিতরণ ।
এছাড়াও জেলা শহরের হারুয়া মানিক ফকিরের গলিতে পবিত্র আশুরা উপলক্ষে জারী গানের আসর অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana