বৃহস্পতিবার, ১৯ Jun ২০২৫, ০৪:১৭ অপরাহ্ন

ছবির শিশুটিই লেখক বন্ধু নওশের আলী হিরা

ছবির শিশুটিই লেখক বন্ধু নওশের আলী হিরা

মোঃ মাইন উদ্দিন :

ছবিতে বাবার কুলের শিশুটি বন্ধু নওশের আলী হিরা। পাশে মা। বাবা নড়াইল সদর উপজেলার হবখালি ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া গ্রামের শেখ দীন মহম্মদ। শেখ দীন মহম্মদ ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম একজন সংগঠক। তিনি ১৯৬৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বোটানি বিভাগের ছাত্র ছিলেন। ষাটের দশকে নড়াইল এলাকার অত্যন্ত মেধাবি ছাত্র হিসেবে পরিচিত ছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন কালে বঙ্গবন্ধুর সাহচার্যে আসার সুযোগ পান। পরে তিনি বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর হয়ে উঠেন। তিনি তৎকালীন বাংলাদেশ ছাত্র লীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসএম হলের সভাপতি ছিলেন। সেসময় আয়ুব বিরোধী ও ছয় দফা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি ১৯৬৬ সালে শিক্ষাজীবন শেষ করে নিজ এলাকায় ফিরে এসে শিক্ষকতা পেশায় যোগ দেন। দেশে তখন চলছিল স্বাধীনতার আন্দোলন। এ আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্র হতে থাকে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা লেঃ মতিউর রহমানের নিকট নলদী স্কুলে স্থাপিত মুক্তিযুদ্ধ প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহন করে নিজ এলাকার যুবকদের সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেন। যোগ দিয়ে লোহাগড়ার বড়দিয়া টোনা এলাকায় এবং ভাটিয়াপাড়া এলাকায় যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন বলে তাঁর সহযোগী যোদ্ধাদের নিকট থেকে জানা যায়। তিনি নড়াইলের তৎকালীন আওয়ামী লীগের একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন। যুদ্ধচলাকালীন সময়ে পরিবারের খোঁজ নিতে এসে রাজাকারদের হাতে ধরা পড়ে যান তিনি। সে সময়টা ছিল আগস্ট মাসের মাঝামাঝি। তখন শ্রাবনের বৃষ্টি হচ্ছিল। খুব সকালে গ্রামের মসজিদের মৌলভি সাহেব নূর মুহাম্মদ এবং চাঁন খার সহযোগিতায় নড়াইলের মুসলিম লীগ নেতা হারুন ও মোক্তারের লোকেরা যারা রাজাকার ছিল তারা শেখ দীন মহম্মদকে নড়াইল সদরে নিয়ে যায়। ডুমুরতলার জলিল রাজাকার জানায়, শেখ দীন মহম্মদকে রাজাকাররা পাক সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছিল। পরে পাক বাহিনীর গুলিতে শহীদ হন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ দীন মহম্মদ। এ সময় নওশের আলী হিরা আড়াই বছরের শিশু। তার অপর ছোট ভাই জাকির হোসেনের বয়স ছিল মাত্র আট মাস। এরপর দুই অবুজ শিশু সন্তান নিয়ে শুরু হয় মা কামরুন্নেছা বেগমের জীবন যুদ্ধ। জানা যায়, স্বাধীনতা পরবর্তী ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু সরকার গঠন করার পর শহীদ শেখ দীন মহম্মদের পরিবারকে সমবেদনা পত্র এবং আর্থিক সহযোগিতা পাঠিয়েছিলেন। মা কামরুন্নেছা বেগম সেই থেকে এখনও জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে তাঁর বয়স ৭৫। মায়ের স্নেহ মমতায় বেড়ে উঠা বন্ধু নওশের আলী হিরা এখন দেশের একজন উল্লেখযোগ্য লেখক ও গবেষক। তার পিতা বীর শহীদ শেখ দীন মহম্মদের দেশের জন্য এই আত্মত্যাগ বাংলার লাল সবুজ পতাকার ভাঁজে ভাঁজে অম্লান হয়ে থাকবে। আমি বন্ধুর পিতার জন্য সকলের দোয়া কামনা করছি। উল্লেখ্য, বাবার কুলের সেই শিশু, বন্ধু নওশের আলী হিরা নড়াইল জেলার হবখালি ইউনিয়নের সিঙ্গিয়া গ্রামের কৃতি সন্তান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু হল ছাত্র লীগের সভাপতি ছিলেন। পরে ছিলেন ছাত্র লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। বর্তমানে তিনি একজন চাকুরীজীবি এবং স্বনামধন্য লেখক। বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষণাধর্মি বইসহ প্রত্নতত্ত্ব, ক্ষুদ্র নৃ-জাতিগোষ্ঠী বিষয়ে অনেক গবেষণাধর্মি গ্রন্থ রচনা করেছেন তিনি। তার প্রকাশিত বই সংখ্যা ২৯টি। এর মধ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের নির্মম হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ও শিশু রাসেলের জীবনী নিয়ে রচনা করেছেন “আমি মায়ের কাছে যাবো– শেখ রাসেল” বইটি। কর্মজীবনে তিনি যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা। এর বাইরে তিনি বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষণা পরিষদের সভাপতিসহ আরও অসংখ্য সামাজিক সংগঠনের সাথে সংস্পৃক্ত। ছোট ভাই জাকির হোসেন একটি বৃহৎ ঔষধ কোম্পানিতে কর্মরত আছেন। ৭৫ বছর বয়সী মা কামরুন্নেছা বেগমের দু’চোখ জুড়ে শুধু ৭১-এর স্মৃতি আর স্মৃতি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana