রবিবার, ১১ মে ২০২৫, ০৫:৪২ পূর্বাহ্ন

বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রতারণা, ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

বঙ্গবন্ধু সেতু প্রকল্পের কাজ নিয়ে প্রতারণা, ৪০ কোটি টাকা আত্মসাৎ

একুশে ডেস্ক:

রাজধানী থেকে মূলহোতাসহ একটি প্রতারক চক্রকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। গতকাল (বুধবার) তাদের গুলশান ও খিলগাঁও থেকে গ্রেফতার করা হয়।

এই চক্রটি রাজধানীর গুলশানে আল তাকদীর ইন্টারন্যাশনাল নামের একটি প্রতিষ্ঠান খুলে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পে আট হাজার কোটি টাকার কাজ পাওয়ার কথা বলে ভুয়া ‘ওয়ার্ক অর্ডার’ তৈরি করে দেশের বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। চক্রটি ওইসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চুক্তিতে কাজ দেওয়ার কথা বলে প্রায় ৪০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

চক্রটিকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার মালিবাগে সিআইডি কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত তুলে ধরেন সংস্থাটির অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক ইমাম হোসেন।

তিনি জানান, চক্রটি ‘সাবকন্ট্রাক্টে’ কাজ দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতারণা করছিল। চক্রটির প্রধান আলমগীর হোসাইন। তার দুই সহযোগী শফিকুল ইসলাম এবং ইমরান হোসাইন। তাদের কাছ থেকে ছয়টি মোবাইল ফোন, বিভিন্ন ব্যাংকের চেকবই, ভুয়া ওয়ার্ক অর্ডারের কপি ও ঠিকাদারদের সঙ্গে করা স্ট্যাম্প চুক্তিপত্রের কপি উদ্ধার করা হয়েছে।

সিআইডি কর্মকর্তা ইমাম হোসেন বলেন, জাপানের ওবায়াশি করপোরেশন বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু প্রকল্পের জন্য ৩০০ কোটি ঘনফুট বালু সরবরাহের কাজ পেয়েছে বলে প্রচার চালান চক্রটির প্রধান আলমগীর হোসেন। প্রতিষ্ঠানটির প্রতিনিধি হিসেবে আলমগীর ও তার সহযোগীরা বিভিন্ন জেলা থেকে বালু সরবরাহের জন্য ঠিকাদারদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন। বালুভরাটের কাজ ‘সাব-কন্ট্রাক্টে’ দেওয়া হবে বলে ঠিকাদারদের সঙ্গে চুক্তি করা হয়। এরপর কমিশন হিসেবে বালু সরবরাহকারীদের কাছ থেকে প্রায় ৪০ কোটি টাকার মতো হাতিয়ে নেয় চক্রটি।

তিনি বলেন, নিজেকে বড় ঠিকাদার প্রমাণ করতে আলমগীর হোসেন গুলশান-১ এ আলিশান অফিস খোলেন। অফিসের সাজসজ্জায় প্রায় দেড় কোটি টাকা ব্যয় করেন। গুলশানের একটি রেস্তোরাঁয় ১১০ ধরনের খাবার পরিবেশন করে ঠিকাদারদের আপ্যায়ন করেন। ঠিকাদারদের নিয়ে রিসোর্টে বড় বড় পার্টিও দেন। তাদের নিয়ে প্রস্তাবিত বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর বালু সরবরাহের নিজস্ব ডাম্পিং পয়েন্টে ‌‘শুভ উদ্বোধন’ লেখা ব্যানারে যমুনা সেতুর কাছে লালগালিচা বিছিয়ে কাজ উদ্বোধন করেন আলমগীর। তারপর এসব ছবি এবং ভিডিও চিত্র বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। আলমগীর হোসেনের এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখে টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার অনেক ঠিকাদার তার গুলশানের অফিসে যোগাযোগ করেন। বিপুল পরিমাণ কমিশন দিয়ে কাজের চুক্তি করেন ঠিকাদাররা।

সিআইডির এই কর্মকর্তা জানান, এভাবে অর্থ আত্মসাতের পর চক্রটি আত্মগোপনে চলে যায়। অভিযোগ পেয়ে তিনজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি।

গ্রেফতার আলমগীর এর আগেও এমন প্রতারণা করেছেন। তিনি রাজধানীর নয়াপল্টনে বিনিময় ইন্টারন্যাশনাল নামের এক প্রতিষ্ঠান খুলে সৌদি আরবের ১৫০টি জাল ভিসা সরবরাহ করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন। তার বিরুদ্ধে চেক ডিজঅনার ও প্রতারণার অভিযোগে প্রায় এক ডজন মামলা আছে বলে জানিয়েছে সিআইডি।

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana