বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন
একাত্তরে আমরা একটা নিছক রাজনৈতিক স্বাধীনতা পেয়েছি। পেয়েছি একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ড এবং বৃহৎ দরিদ্র জনগোষ্ঠী। কিন্তু আজও এদেশের সিংহভাগ মানুষ স্বাবলম্বী হতে পারি নাই। প্রত্যাশিত অর্থনৈতিক মুক্তি আসে নাই। অভাবের যাঁতাকলে পড়ে নূন্যতম মৌলিক চাহিদা অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা প্রভূতির মেটানো অনেকের পক্ষেই কঠিন। আজ বিকালে শহরের ব্যস্ততম সড়কে হাটতে গিয়ে দেখলাম- আমার মাতৃতুল্য বা ওনারও বয়:জ্যৈষ্ঠ এক বৃদ্ধা একটি ডায়গনস্টিক সেন্টারের ফাইল হাতে নিয়ে সাহেব-বাবুদের কাছে ভিক্ষা চাচ্ছে। তথা কথিত সাহেব বাবুরা এমন এক ভান করছে যেন ঐ বৃদ্ধাকে টাকা দিলে- তাদের হাত অপরিস্কার হয়ে যাবে। বিবেকের তাড়নায় আমার মানিব্যাগ থেকে একটি পাঁচ টাকার কয়েন দিয়ে- নিজেকে দায় মুক্ত করলাম। কিন্তু এটা তো কোনো স্থায়ী সমাধান নয়। কারণ বৃদ্ধাকে ডাক্তারের ফি-পরীক্ষার খরচ ও ঔষধের জন্য হাজার হাজার টাকা গুনতে হবে। হয়তবা এটাও হতে পারে যে-গরীব বৃদ্ধা এভাবে ভিক্ষা করতে করতে একদিন পটল তুলতে যাবে বা মারা যাবে। আর মহাসিংহাসনে বসা ডাক্তার মহাশয় টাকা গুনতে গুনতে এক সময়- তিনি এক তলা বাড়ির মালিকানা থেকে কবিরাজের মতো সাত তলা বাড়ির মালিক বনে যাবেন। কিন্তু ভদ্রবেশী অপরাধী ডাক্তার মহাশয় একবারও চিন্তা করলেন না যে- বৃদ্ধা রোগীনির আর্থিক অবস্থা কতটুকু সচ্ছল!
আর অন্যদিকে স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও- আমরা বুর্জোয়া-সাম্রাজ্যবাদী শক্তির শিকল থেকে মুক্ত হতে পারি নাই। ঐ বেনিয়া গোষ্ঠী আমাদেরকে এমন একটি প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিয়েছে যে। তথাপি সন্ধ্যার পরে পাড়া-মহল্লার মোবাইলের দোকানগুলোতে- স্বল্প আয়ের মানুষকেও ফ্লাক্সিলোড ও এম বি (ইন্টারনেট) টাকা দিতে লাইনে দাড়াতে হয়। এই টাকাগুলোর মালিক পশ্চিমা-পুঁজিবাদী বহুজাতি কোম্পানীগুলো। সনাতন বা রক্ষণশীল ধ্যান-ধারণা থেকে যদি বলতে চাই, তাহরে বলতে হয়- বিজ্ঞান যখন এতো উন্নতির শিখরে পৌঁছায় নাই, সেই সময় কি আমাদের ভিতর আন্তরিকতা বা বিনোদন স্পৃহা ছিল না ?
আর আলতা, লিপিস্টিক, নেলপালিশ, ফেইস ওয়াস, সুগন্ধি তেল প্রভূতির ব্যবহার ধনী নারীদের ভেতরে কৃত্রিম অবয়ব সৃষ্টি হয়। কিন্তু সনাতন সমাজেও কিউপ্রেট্টা বা মোনালিসার অবস্থান ছিল। যদি এসব ধনীর দুলালীদের রূপচর্চার টাকা গরীবের পেটে ভাত যোগাতে চেষ্টা করা হয়- তাহলেও সমাজে কিছুটা ভারসাম্য থাকতো।
ইদানিংকালে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছে বিষফোড়া হয়ে দাড়িয়েছে। কৃত্রিমভাবে দ্রব্যের ঘাটতি সৃষ্টি করে প্রায়ই পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশগুলো থেকে যে পন্যগুলো আমদানি হয়- সে ক্ষেত্রে একটি করে উভয় দেশে নির্দিষ্ট একটি সিন্ডিকেট বাজার নিয়ন্ত্রণ করে। তখন একটি সিন্ডিকেটের ইশারায় অপর দেশের নির্দিষ্ট সিন্ডিকেটটি দ্রব্যের যোগান কমিয়ে দেয়। ফলশ্রতিতে চাহিদার তুলনায় যোগান কমে যায় এবং মূল্য বৃদ্ধি পায়। আমরা এই অবক্ষয়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছি- হয়তো বা একদিন প্রতিবাদে নামব- হয়তো বা আমাদের হাতে আঙ্গুল রাইফেলের টিগারে চলে যাবে। তবুও ভাল থাকব। কারণ সৃষ্টিকর্তা প্রতিবাদ করার মতো একটা সৎসাহস দিয়েছে। যা-বরাবরই বিবেককে নাড়া দেয়।
পশ্চিমা বিশ্ব থেকে ধার করে আনা কিন্ডারগার্টেন নামক শিক্ষা ব্যবস্থা দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য সাপে বর হয়ে দাঁড়িয়েছে। দরিদ্র শিশু বাচ্চারা স্কুলে না গিয়ে- অভাবের তাড়ণায় সাহেব বিবিদের বাসায় কাজ করতে গিয়ে ঘাড়ধাক্কা খাচ্ছে, লাথি খাচ্ছে। আমরা চাই শোষনহীন সমাজ ও সৃজনশীল শিক্ষা ব্যবস্থা। যেখানে টাকা নয়; মেধাই যোগ্যতার মাপকাঠি। এবং আমাদের কোমলমতি শিশুরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে দেশ ও জাতির শক্তিতে পরিণত হবে। সেই জন্য আমরা চাই, উর্বর মেধার চর্চা।
শাফায়েত জামিল রাজীব
-সম্পাদক
একুশে টাইমস্ নিউজ মিডিয়া
এন্ড ইউটিউব চ্যানেল।