সোমবার, ২৭ মার্চ ২০২৩, ১২:২০ অপরাহ্ন

মাজার কমিটিতে কেউ না হউক শুটকির বাজারে বিড়াল পাহারাদার

মাজার কমিটিতে কেউ না হউক শুটকির বাজারে বিড়াল পাহারাদার

 মোঃ মাইন উদ্দিন :
 পীর মাজারের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে ফকির বাবা, পাগলা বাবা, তালা বাবা ও শিকলসহ লেংটা বাবাদেরও মাজার রয়েছে। যা পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এতবেশি আছে বলে আমার জানা নেই। পৃথিবীর ইতিহাস যতবেশি ঘেঁটেছি ততই এ বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছি। আমার মতে এসব মাজার পরিচালনার জন্য কমিটির প্রয়োজন হয়। স্বচ্ছ কমিটি ছাড়া মাজারের উন্নয়ন এবং শৃঙ্খলা বজায় রাখা কিছুতেই সম্ভব না। কেননা, মাজার সবার জন্য উন্মুক্ত। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, দল মত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের সমাগম ঘটে। মাজারে আশ্রয় নেই পাগল, ভবঘুরে। তাছাড়া ওরশকে ঘিরে জমে উঠে নারী-পুরুষের মিলন মেলা। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু মাজারকে মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীরা মাদক সেবন এবং ক্রয়-বিক্রয়ের অভয়াশ্রম বলে মনে করে। সচেতন মহলও মাজারকে ঘিরে মাদকের উৎপত্তি হয় এমন মত পোষন করে। তবে মাজারের বাইরে অন্য কোথাও যে মাদক নেই, এ কথা বড় গলায় বলা অসম্ভব। কারণ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মাজার ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কাউকে না কাউকে মাদকসহ আটক করছেই প্রতিদিন। কিন্তু কিছু কিছু মাজার যে মাদকের অভয়াশ্রম না, এই কথাটা বুুক ফুলিয়ে বলার সুযোগ নেই। তবে বুক ফুলিয়ে এটা বলা যায়, মাজার পরিচালনা কমিটি স্বচ্চ হলে, সৎ এবং ন্যায় নিষ্ঠাবান হলে কোনো মাজারে মাদক সেবন তো দুরের কথা, সিগারেট খাওয়ার সুযোগও কেউ পাবে না। আমি মনে করি মাজার উন্নয়ন, মাজারের পবিত্রতা ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে হলে মাজার পরিচালনা কমিটি অবশ্যই হতে হবে সৎ, ন্যায় নিষ্ঠাবান ও সমাজের সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য লোক নিয়ে। অর্থাৎ যাদের জীবনে অন্তত জুয়া মাদকের কলংক নাই। মাজার ও মাদক প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মনে পড়ে গেল নরসিংদীর বেলাব উপজেলার সররাবাদ লেংটা বাবার মাজারের কথা। আমি ৩ বছর আগে ওই মাজারে ওরশে গিয়েছিলাম। ওরশে মাদকের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে, গাঁজার ধোঁয়ায় শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল আমার। আমি হার্টের রোগী। আমার জন্য যদিও ধোঁয়া চরম শত্রু তবুও গেলাম কমিটির লোকজনের কাছে। সেখানে গিয়ে দেখি আরও ভয়াবহ দৃশ্য। কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদধারী একজন মাদক সেবন করে বেহুশ হয়ে আছে। এতটাই বেহুশ সে, আমি কে, তাও চেনে নাই। পরে এক চায়ের দোকানে বসে চা খেলাম। কিছুক্ষণ পর শুনি হুড়াহুড়ি। এগিয়ে গেলাম সামনে, মানুষে বলাবলি করছে, দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মাজারে আসা ২৫ বছর বয়সী এক নারীকে ধর্ষণ করেছে এক লম্পট। এখানে মানুষ জড়ো হতে শুরু করেছে। আমি ঝামেলাতে না গিয়ে অসুস্থ আমাকে আমি নিজেই সামলালাম। শুধু লেংটা বাবার মাজারেই নয়, কুমিল্লার বেলতলি মাজারেও এই অবস্থা। আমি গিয়েছিলাম ৬/৭ বছর আগে। সেখানেও একইরকম কমিটি দেখেছি। মদ-গাঁজা খাওয়ার আস্তানাও কম না। সেদিন আমার এক প্রশ্নের জবাবে স্থানীয়রা খুব দুঃখ প্রকাশ করে বলেছিলেন, বেলতলির দায়িত্বশীলদের দায়িত্বহীনতা আর স্থানীয় রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে আজ মাজারের এই অবস্থা। সেদিন বেলতলির মানুষের মনের ভাষা আমি ঠিকই বুঝতে পেরেছিলাম। বুঝতে পেরেছিলাম তাদের মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা কষ্ট। যা ছিল খুবই দুঃখজনক। তবে তে আজকাল এমনটাই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। সমাজের ভালো মানুষের দুরে রেখে একশ্রেণির নীতিনির্ধারকরা মাদকসেবী ও মাদক ব্যবসয়ীদেরকে টেনে হেঁচড়ে এনে মাজার উন্নয়ন ও পরিচালনা কমিটির গুরুত্বপূর্ণ পদে বসিয়ে দিচ্ছে। আর এ সুবাদে তারাও মাজারকে করে ফেলছে মাদকসেবীদের অভয়াশ্রম। যা শুটকির বাজারে বিড়াল পাহারাদারের মতো। কিন্তু নীতিনির্ধারকরা কি একবার ভেবে দেখে, বিড়ালের সামনে শুটকি কতটা নিরাপদ?

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana