বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ০৩:৫৩ পূর্বাহ্ন
মোঃ মাইন উদ্দিন, কুলিয়ারচর প্রতিনিধি : প্রবাসীর লাশের সাথে পরিবারের স্বপ্ন মাটি চাপা পড়ার আত্মচিৎকারে ভারি হয়ে উঠেছে ওই প্রবাসীর বাড়ির পরিবেশ। পুরো বাড়িতেই কান্নার রোল। অশ্রুসিক্ত চোখে শান্তনা দিতে এসে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে স্বজন ও শুভাকাঙ্ক্ষিরা। কান্না আর হৃদয় বিদারক এ চিত্রটি ছিল বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সৌদি আরব প্রবাসী মৃত সোহেল রানা (৩৫) এর লাশবাহী এম্বুলেন্সটি তার নিজ বাড়ি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের নলবাইদ গ্রামে এসে পৌঁছার পর। দেখা গেছে, কফিন থেকে সোহেল রানার লাশ যখন বের করা হয় তখন বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন তার মমতাময়ী মা রাজিয়া বেগম, স্ত্রী নাদিরা আক্তার ও পাঁচ বছরের শিশু কন্যা মাইশা। এ সময় স্বজন আর প্রতিবেশিদের আর্তচিৎকারে গ্রামের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। মৃত সোহেল রানা নলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের মরহুম ছমির উদ্দিন ব্যাপারীর বাড়ির মৃত মোঃ হারিছ মিয়ার বড় ছেলে। সে ব্যক্তিজীবনে এক কন্যা সন্তানের জনক। পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, সোহেল রানা তার পরিবারের সুখ স্বচ্ছন্দের জন্য ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে সুদুর সৌদি আরবে যান কাজের জন্য। সেখানে সে শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন। আড়াই বছর কাজ করার পর হৃদরোগে আক্রান্ত হয়। কিছুদিন রোগে ভোগার পর চলতি বছরের ১৫ মে সৌদি আরব তায়েফ শহরের কিং আব্দুল আজিজ মেডিকেলে হার্টের অপারেশন করা হয়। এতে সে সুস্থ হয়নি। পরে গত ২৩ আগস্ট চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু বরণ করেন। মৃত্যুর ১৪ দিন পর গতকাল ৭ সেপ্টেম্বর বিকালে তার অপর ছোট ভাই সৌদি প্রবাসী জুয়েল রানা সোহেল রানার মরদের সৌদি আরব থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তুলে দেন। পরদিন বৃহস্পতিবার ৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১১ টায় তার স্বজনরা ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে একটি এম্বুলেন্স যোগে মরদেহ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে আসেন। এ সময় মা, স্ত্রী, শিশু সন্তান, ভাই, স্বজন ও প্রতিবেশিদের কন্নায় গ্রামের আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠে। এরপর ওইদিন বিকেল সাড়ে ৫ টায় নলবাইদ মধ্যপাড়া সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় মাঠে নামাজা নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। জানাজা নামাজের পূর্বে কুলিয়ারচর উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মোহাম্মদ মুক্তিমামুদ খোকা মরহুম সোহেল রানার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বলেন, সে ছিল তাদের পরিবারের প্রধান উপার্জনকারী। তার অকাল মৃত্যুতে গোটা পরিবার অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি মা, বাবা, দেশ ও দেশের মাটি ছেড়ে যারা প্রবাসে যায় তারা প্রত্যেকেই তাদের পরিবারকে স্বচ্ছল করার উদ্দেশ্য নিয়ে যায়। যারা লাশ হয়ে ফিরে তারা প্রত্যেকেই খালি হাতে ফিরে। আজ প্রবাসী সোহেল রানার জানাজা নামাজের মাঠে দাড়িয়ে বাংলাদেশ সরকারের উদ্দেশ্যে একটি কথাই বলবো, কোনো প্রবাসী দেশের বাইরে মৃত্যু বরণ করলে যেন তাদের পরিবারকে সহয়তা করা হয়। কারণ এখানে এসে আমি বুঝতে পারছি, জানাজা নামাজ শেষেই প্রবাসী সোহেল রানার লাশের সাথে তার পরিবারের স্বপ্নও মাটি চাপা পড়বে।