মঙ্গলবার, ১৯ মার্চ ২০২৪, ০৪:০১ অপরাহ্ন

কুলিয়ারচরে এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা

কুলিয়ারচরে এক গৃহবধূকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে থানায় মামলা

মোঃ মাইন উদ্দিন, কুলিয়ারচর প্রতিনিধি :

কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরে পাওনা টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে দুলেনা (৪০) নামে এক গৃহবধূর শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে আগুন ধরিয়ে দিয়ে হত্যাচেষ্টার অভিযোগ উঠেছে গৃহবধূর ছেলের উকিল শ্বশুরের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় গত ২২ জুলাই কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। মামলা নং- ১৫। অগ্নিদগ্ধ গৃহবধূ দুলেনা বর্তমানে হাসপাতাল বেডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মরণ যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছে। দুলেনা উপজেলার ফরিদপুর ইউনিয়নের নলবাইদ মধ্যপাড়া গ্রামের সাহেব মিয়ার স্ত্রী।

মঙ্গলবার ২৬ জুলাই দুপুরে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ দুলেনার সাথে কথা হলে সাংবাদিকদের তিনি জানান, তার ছেলে রিমন মিয়ার উকিল শ্বশুর পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর (ভূঞা বাড়ী) গ্রামের মৃত কাঞ্চন মিয়ার ছেলে আমান মিয়া (৪৫) ব্যাগের ব্যবসার নাম করে তাদের নিকট থেকে ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা কর্জ (ধার) নেয়। পরে কয়েক ধাপে তাদের পাওনাকৃত ১ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে ১ লক্ষ ২৪ হাজার টাকা ফেরত দেয়। বাকী ২৬ হাজার টাকা দেয় দিচ্ছি বলে ঘুরাইতে থাকে। বাকী টাকা ফেরত না দেওয়ায় ওই গৃহবধূ ও তার স্বামী বিভিন্ন লোকজনের নিকট বিচার দাবী করলে অভিযুক্ত আমান মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওই গৃহবধূ সহ তার স্বামীকে বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদর্শন করে আসছিলো। এরই মধ্যে গত ২১ জুলাই বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে ওই গৃহবধূ মানত আদায় করে পার্শ্ববর্তী ফরিদপুর হযরত মাওলানা আবু আলী আক্তার উদ্দিন শাহ্ কলন্দর গাউস পাক (রঃ) কান্দুলিয়া মৌলোভী সাহেবের মাজার শরীফ থেকে বাড়ী ফেরার পথে ফরিদপুর গ্রামের মঞ্জিল মিয়ার বাড়ির পিছনে মুরগীর ফার্ম সংলগ্ন আসা মাত্র পূর্ব থেকে উৎ পেতে থাকা আমান মিয়া ওই গৃহবধূকে খুন করার উদ্দেশ্যে গৃহবধূর গলায় জাবরে ধরে মাথায় ও শরীরে এক বোতল দাহ্য পদার্থ ঢেলে ম্যাচ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এসময় গৃহবধূ ও তার সাথে থাকা হেনা বেগম ওরুফে মস্তি নামে এক মহিলার ডাক চিৎকারে পার্শ্ববর্তী বাড়ির ছকিদার আল আমিনের স্ত্রী আছমা (৩৫) ও ইকবালের স্ত্রী খাদিজা (৩৫) এগিয়ে এসে তাৎক্ষণিক আল আমিনের বাড়ীর টিউবওয়েলে নিয়ে পানি ঢেলে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারলেও গৃহবধূর শরীর জ্বলসে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে ভর্তি করে। বর্তমানে আহত দুলেনা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, আমান মিয়া চোখের পলকে দুলেনার শরীরে দাহ্য পদার্থ ঢেলে ম্যাচের সলা দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় দুলেনা শরীরে আগুন লাগা অবস্থায় এদিক-সেদিক ছোটাছুটি শুরু করে চিৎকার করতে থাকে। পরে প্রথমে আছমা টিউবওয়েলে নিয়ে শরীরে পানি দিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করে। কুলিয়ারচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. তমাল কান্তি মল্লিক বলেন, অগ্নিদগ্ধ রোগীর অবস্থা বর্তমানে কিছুটা উন্নতির দিকে। এখনো তার চিকিৎসা চলছে। ঘটনা জানতে মঙ্গলবার দুপুরে অভিযুক্ত আমান মিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে তালা ঝুলিয়ে স্ব-পরিবারে পলাতক রয়েছে। তাই অভিযুক্তের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা জানান, গৃহবধূর শরীরে দাহ্য পদার্থ দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার ঘটনায় ৪(২)(থ)২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন সংশোধনী ২০০৩; দহনকারী পদার্থ দ্বারা আগুন লাগাইয়া আহত করার অপরাধে থানায় একটি মামলা রুজু হয়েছে। অভিযুক্ত আমান মিয়াকে আটক করতে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana