শুক্রবার, ০৯ Jun ২০২৩, ০২:০৪ অপরাহ্ন
একুশে ডেস্ক:
সীতাকুণ্ডের সোনাইছড়ি ইউনিয়নের বিএম কনটেইনার ডিপোর ভয়াবহ আগুন নিয়ন্ত্রণ এলেও এখনো নেভেনি। অগ্নিকাণ্ডের ৬০ ঘণ্টা পরও থেমে থেমে জ্বলছে আগুন। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে আগুন নেভাতে টানা কাজ করে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। পাশাপাশি আগুন নেভাতে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও তাদের সঙ্গে কাজ করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা জানান, এখনো থেমে থেমে আগুন জ্বলতে থাকা ২৮টি কনটেইনারে পানি ছিটিয়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন তারা। কিছুক্ষণ পানি দেওয়ার পর আগুন থেমে গেলেও পুনরায় ধোঁয়ার কুণ্ডলী সৃষ্টি হয়ে জ্বলে উঠছে আগুন।
আজ মঙ্গলবার সকালে আগুন জ্বলতে থাকা যে কনটেইনারগুলোর ওপর তারা পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন তার আশপাশে রাসায়নিক ভর্তি আরও কনটেইনার আছে বলে ধারণা করছেন তারা। তবে রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনার এখনো চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। তারা মৃদুভাবে জ্বলতে থাকা কনটেইনারগুলোর ওপর পানি ছিটানোর পাশাপাশি যেসব কন্টেইনারে রপ্তানি পোশাক আছে বলে মনে করছেন, তারা সেগুলো দরজা খুলে পণ্যের আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছেন।
ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা আরও জানান, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর থেকে আগুন নেভাতে তারা প্রাণপণে চেষ্টা করছেন। তবে ডিপোর ভেতরে থাকা কনটেইনারগুলোতে আগুন জ্বললেও সেখানে থাকা ঝুঁকিপূর্ণ ১২টি রাসায়নিক ভর্তি কনটেইনার শনাক্ত করতে পারেননি। যার ফলে ঘটনার ৬০ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও এখনো আগুন নেভানো সম্ভব হয়নি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ডিপোর মূল ফটক থেকে দেড় শ মিটার দক্ষিণে স্তূপ করে রাখা কনটেইনারে থেমে থেমে আগুন জ্বলছে। আর জ্বলতে থাকা কনটেইনারগুলোর ওপর ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা অনবরত পানি ছিটিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া ডিপোর উত্তর পাশের বেশ কয়েকটি কনটেইনারে আগুন জ্বলতে দেখা না গেলেও সেগুলো থেকে অনবরত ধোঁয়ার কুণ্ডলী বেরোচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফায়ার সার্ভিস সদস্য বলেন, গতকাল সোমবার মধ্যরাতে তারা যখন আগুন নেভানোর কাজ করছিলেন, ঠিক তখনই জ্বলতে থাকা কনটেইনারের ভেতর থেকে নীল রঙের ছোট কেমিক্যাল ভর্তি একটি কনটেইনার বিস্ফোরিত হয়। এ সময় কনটেইনারটি ছিটকে তাদের সামনে এসে পড়ে। এ ঘটনায় তাদের কেউ আহত না হলেও পুনরায় বিস্ফোরণের শঙ্কায় তারা ভীত হয়ে পড়েন।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারী পরিচালক পূর্ণ চন্দ্র মুৎসুদ্দি। তিনি জানান, ডিপোর আগুন নেভাতে রোটেশন অনুযায়ী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। গতকাল সোমবার রাত থেকে ফায়ার সার্ভিস ৬টি ইউনিটের ৫০ জন সদস্য আগুন নেভানোর কাজ করছেন। আগুন নেভাতে ফোম জেনারেটর, কেমিক্যাল জেনারেটর ব্যবহার করা হচ্ছে। ডিপোতে কনটেইনার মোভার সংকটের কারণে কাজ করতে বেগ পাচ্ছেন তারা। মোভার বাড়ানো গেলে কনটেইনার সরিয়ে অগ্নি নির্বাপণের কাজ আরও দ্রুত করা যেত।
আগুন পুরোপুরি নেভাতে আরও অনেক সময় লাগবে জানিয়ে পূর্ণ চন্দ্র বলেন, ‘মোভার সংকটের কারণে একটি কনটেইনার নামাতে, সেটিং করতে অনেক সময় লেগে যায়। নামানোর পরে আগুনের তাপের কারণে দরজা খোলা যায় না। দেখা যায় বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দরজার লোহা বড় হয়ে গেছে। তখন দরজাকে কাটতে হয়। স্টিলের দরজা কাটতেও অনেক সময় লেগে যায়। এরপর এগুলোতে পানি দিয়ে আগুন নেভাতে হয়।’
সীতাকুণ্ড ফায়ার সার্ভিসের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. নুরুল আলম দুলাল জানান, আগুন নেভারে রাতভর কাজ করেছেন তারা। মঙ্গলবার ভোর রাতের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছিল। কিন্তু উত্তপ্ত কনটেইনারের ভেতরের পণ্যগুলো থেকে আবার আগুন ধরে যায়। কনটেইনারের আশপাশে থাকা রাসায়নিক কেমিক্যালের কনটেইনারগুলো চিহ্নিত করতে না পারায় আগুন পুরোপুরি নেভাতে বেগ পাচ্ছেন তারা। তবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে আগুন নেভানোর চেষ্টা করছেন তারা।
বিস্ফোরণের এ ঘটনায় ৪১ জনের নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ২০০ জনেরও বেশি। আগুন নেভাতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফায়ার সার্ভিসের ৯ জন সদস্য।