বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫৮ অপরাহ্ন

কুলিয়ারচরে শ্মশান প্রতিরক্ষা দেয়াল ভাঙ্গার অভিযোগে মামলা : পরিদর্শনে রানা দাস গুপ্ত

কুলিয়ারচরে শ্মশান প্রতিরক্ষা দেয়াল ভাঙ্গার অভিযোগে মামলা : পরিদর্শনে রানা দাস গুপ্ত

কুলিয়ারচর প্রতিনিধি, মোঃ মাইন উদ্দিন :
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর পৌর এলাকার পূর্ব গাইলকাটা (ঘোষপাড়া) মহল্লার দীর্ঘ ৪০০ বছরের পুরনো শ্মশানের প্রতিরক্ষা দেয়াল ভাঙ্গার ঘটনায় গত ২৮ মে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা হয়েছে। মামলা নং- ১১/৬১।
এ ঘটনার সংবাদ পেয়ে ৩ জুন শুক্রবার বিকালে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাস গুপ্ত কুলিয়ারচর পূর্ব গাইলকাটা (ঘোষপাড়া) এলাকার শ্মশান ঘাট পরিদর্শনে আসেন।
এ সময় তার সাথে ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা এড. তাপস পাল, সভাপতি লায়ন জে.এল. ভৌমিক, সাধারণ সম্পাদক চন্দ্রনাথ পোদ্দার, হিন্দুদের নেতা মনিন্দ্র নাথ, জিতেন্দ্র ভৌমিক, নারায়ন চন্দ্র ঘোষ, অধ্যাপক রতন চন্দ্র ঘোষ ও দৈনিক মানবজমিন পত্রিকার বার্তা সম্পাদক কাজল চন্দ্র ঘোষ।
স্থানীয়দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসান, পৌর মেয়র সৈয়দ হাসান সারওয়ার মহসিন, উপজেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সৈয়দ নূরে আলম, কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা, পৌর প্যানেল মেয়র মোঃ হাবিবুর রহমান ও পৌর কাউন্সিলর মোঃ সেলিম মিয়া প্রমূখ।
শ্মশান ঘাট পরিদর্শন শেষে এক প্রতিবাদ সভায় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রীষ্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. রানা দাস গুপ্ত প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, আগামী ১০ দিনের মধ্য কুলিয়ারচরের হিন্দুদের স্মশানের জায়গা দখলমুক্তসহ স্মশানের পথ উম্মোক্ত করে হামলাকারীদের বিচার করতে হবে। তানাহলে সারাদেশে বিক্ষোভ প্রতিবাদ করে আন্দোলনে নামা হবে। তিনি আরো বলেন, অভিযোগ রয়েছে গত ২৬ মে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও আ.লীগ নেতা ইয়াছির মিয়ার লোকজন কুলিয়ারচর পৌর এলাকার ৪০০ বছরের পুরানো স্মশানের জায়গাটি দখলের চেষ্টায় দেয়াল ভেঙ্গে দেয়। শুধু তাই নয় স্মশানের পথটিও বন্ধ করে দেয়। দেয়াল ভাঙ্গার সময় স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলীর লোকজন বাঁধা দিলে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের লোকজন তাদেরকে মারধোর করে আহত করে। এ ঘটনায় পরদিন ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৩/৪ জনকে আসামী করে কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করে সুমন ঘোষ নামে এক হিন্দু নেতা। মামলার অভিযোগে প্রধান আসামী করা হয় বাবুল মিয়াকে। এ নিয়ে কয়েকদিন যাবত কুলিয়ারচর এলাকায় হিন্দু ধর্মাবলীদের সাথে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের লোকজনের মধ্য উত্তেজনা বিরাজ করছে। এই খবর পেয়ে এড. রানা দাস গুপ্ত ঢাকা থেকে একটি টিম নিয়ে শুক্রবার বিকেলে কুলিয়ারচর পৌঁছে স্মশান এলাকা পরিদর্শন শেষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমতিয়াজ বিন মুছা জিসানের সভাপতিত্ব অনুষ্টিত এক প্রতিবাদ সভায় রানা দাস গুপ্ত আরো বলেন, স্মশানের দখলকৃত জায়গা খালি করে পথ চলাচলের রাস্তা দিতে হবে। নইলে সারাদেশে বিক্ষোভ সমাবেশসহ তীব্র আন্দোলন করার ঘোষনা দেন তিনি। এছাড়া থানায় দায়ের করা মামলাটি দ্রুত চার্জশিট দিয়ে আসামীদের বিচারের ব্যবস্থা করতে হবে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায় কুলিয়ারচর পৌর এলাকার পূর্ব গাইলকাটা (ঘোষপাড়া) মহল্লায় প্রায় ৪০০ বছর আগে নির্মিত শ্মশান ঘাটের আশেপাশে বিগত ৫-৭ বছরে কুলিয়ারচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় লোকজন আবাসিক ভবন নির্মাণ করে বসবাস করিয়া আসছে। আবাসিক ভবনে লোকজনের বসবাসের সুবিধার্থে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান স্থানীয় ঘোষপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতৃবৃন্দদের সাথে আলাপ আলোচনা করে শ্মশান ঘাটটি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের সুবিধামত অন্যত্র স্থানান্তর করে একটি আধুনিক দৃষ্টি নন্দন শ্মশান ঘাট স্থাপন সহ উক্ত শ্মশান ঘাটটি ফুলের বাগান তৈরী করে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের ব্যবহারের জন্য প্রস্তাব রাখেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়ার প্রস্তাবে একমত পোষণ করেন। পরবর্তীতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনদের না জানিয়ে ও অজান্তে কতিপয় অজ্ঞাত নামা লোকজন গত ২৫ মে দিবাগত রাত সাড়ে আটটার দিকে শ্মশান ঘাটের বাউন্ডারি ওয়াল ভাঙ্গিয়া ক্ষতি সাধন করে। পর দিন ২৬ মে সকাল আনুমানিক ১১ ঘটিকার সময় পূর্ব গাইলকাটা গ্রামের আব্দুল সৈয়দ এর পুত্র বাবুল মিয়া (৪৫), সুমন মিয়া (২৩) ও তাতারকান্দি (বন্দের হাটি) গ্রামের মিষ্টু মিয়ার পুত্র রানা মিয়া (২৬) এবং আক্কেল আলী ওরুফে মুছা মিয়ার পুত্র সুমন মিয়া (৩২) সহ অজ্ঞাত নামা ৩/৪ জন লোক দলবদ্ধ ভাবে একত্রে ট্রাক্টর যোগে বালু দিয়ে শ্মশান ঘাট ভরাট করিয়া জবর দখল করিতে গেলে ঘোষপাড়া হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন তাদের বাঁধা নিষেধ দেয়। এ সময় উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়ার পতিত জায়গায় উভয় পক্ষের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে বাবুল মিয়া ও তার লোকজন বাঁশের লাঠি ও লোহার রড দিয়ে বাঁধা প্রদানকারী সুমন ঘোষ (৪০), কৃষ্ণ চন্দ্র ঘোষ (৬০), রেখা ঘোষ (৫০), নয়ন ঘোষ (৪২) ও পান্না ঘোষ (৫২) দের উপর হামলা করে এলোপাথারী বাইরাইয়া ও কিল ঘুষি মারিয়া নীলা ফুলা জখম করে এবং ভয় ভীতি প্রদর্শন করে। এ ঘটনায় হিন্দু সম্প্রদায়ের পক্ষে পূর্ব গাইলকাটা (ঘোষপাড়া) মহল্লার পরিমল চন্দ্র ঘোষের পুত্র সুমন চন্দ্র ঘোষ বাদী হয়ে একই গ্রামের মৃত নারায়ন চন্দ্র ঘোষের ছেলে রাকেশ চন্দ্র ঘোষ (২৭)কে সাথে নিয়ে ৪ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত নামা ৩/৪ জনকে আসামী করে গত ২৮ মে তারিখ কুলিয়ারচর থানায় একটি মামলা দায়ের করে মামলা নং- ১১/৬১।
এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ইয়াছির মিয়া বলেন, মামলার এজাহারের কোথাও আমার নাম না থাকলেও একটি কুচক্রী মহল রাজনৈতিক ভাবে আমাকে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে বিষয়টি গোলাটে করতে এবং একটি দাঙ্গা হাঙ্গামা সৃষ্টি করার লক্ষে শ্মশান ভাঙ্গার নাটক সাজিয়েছে। এখানে শ্মশানের উপর কোন প্রকার আঘাত আনা হয়নি। আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে এসব অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, এখানে স্মশানে যাওয়ার পথ আগে থেকেই ছিলনা। আমার জায়গার ওপর দিয়ে লাশ নিতে হয়। আমি বিদেশী টাকায় ৭ তলা ভবন নির্মাণ করেছি। স্মশানটি যেহেতু আমার বিল্ডিংয়ের পাশে, তাই হিন্দুদের বলেছি মানুষ পোড়ানোর সময় দুর্গন্ধ হয়। একারনে অন্যত্র আমি হিন্দুদের নতুন স্মশান করার প্রস্তাব দিয়েছিলাম। তারা আমার প্রস্তাব গ্রহনও করে। কিন্ত আমার প্রতিপক্ষরা আমার মানসন্মাণ নষ্টসহ সমাজে আমাকে অপমান করতে উঠেপড়ে লেগেছে। এই চক্রটি আজ রানা দাস গুপ্তকে কুলিয়ারচর এনে তাকে ভুল বুঝিয়ে বিষয়টি গোলাটে করেছে। আমি বিদেশ থেকে জানতে পারি শ্মশান সংলগ্ন আমার ৭ তলা বিশিষ্ট বিল্ডিং এর পাশে ময়লা আবর্জনায় ভর্তি এবং ঝোপঝাড় থেকে সাপ এসে আমার বাসায় প্রবেশ করে। এ বিষয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের মুরুব্বি সুধীর চন্দ্র ঘোষকে ফোন দিয়ে বলি, দাদা আমার বাসার পাশে থাকা ঝোপঝাড় গুলো একটু পরিস্কার করে দিন। দাদা আমাকে বলেন আমাদের কোন লোকজন নেই আপনার লোকজন দিয়ে পরিস্কার করে নিন। তখন আমি আমার লোকজন দিয়ে ময়লা-আবর্জনা ও ঝোপঝাড় পরিস্কার করে আমার জায়গাটি পরিস্কার করে মাটি ভরাটের সময় শ্মশানঘাটের দীর্ঘ দিনের পুরানো মেয়াদ উত্তীর্ণ প্রতিরক্ষা দেয়ালের কিছুটা অংশ মাটি ভর্তি ট্রাকের চাকার আঘাতে ভেঙ্গে যায়। এ সংবাদ পেয়ে আমি ঢাকা থেকে বাড়ি এসে তাৎক্ষণিক লোকজন দিয়ে পুরু দেয়াল নতুন করে নির্মাণ করে দেই। মূল কথা না জেনে এখানে আমার প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক একটি মহল আমাকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার হীন চক্রান্তে লিপ্ত হয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের ইন্দন দিয়ে আমার কোন বক্তব্য না নিয়ে আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ এনে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
আমি কুলিয়ারচরে এমন কোন পূজা মন্ডপ কিংবা মন্দির নেই যেখানে আমি অনুদান প্রদান করিনি। লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদান প্রদান করে সহযোগিতা করেছি। এমনকি পৌর এলাকার দোয়ারিয়া শীল পাড়ায় ১২ লক্ষ টাকা দিয়ে একটি আধুনিক শ্মশানঘাট নির্মাণ করে দিয়েছি। আমি যদি হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর জলুম করে জায়গা দখল করার পায়তারা করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিটি অনুষ্ঠানে লক্ষ লক্ষ টাকা অনুদার দিয়ে সহযোগিতা করতামনা। আমি এসব মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।
কুলিয়ারচর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা বলেন, মামলাটি তদন্তাধীন রয়েছে। অভিযুক্তরা বিজ্ঞ আদালত থেকে আগাম জামিন নিয়েছে।
স্থানীয় প্রশাসন ঘটনার দিকে সবসময় নজর রাখছে বলে জানান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রুবাইয়াৎ ফেরদৌসী।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana