শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

পাঁচ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ও নজরদারী ঘিরে শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দান

পাঁচ স্তরের বিশেষ নিরাপত্তা ও নজরদারী ঘিরে শোলাকিয়ায় ঈদগাহ ময়দান

ইমরান হোসেন, বার্তাপ্রধান:

ঈদের চাঁদ দেখার আর মাত্র কয়েক ঘন্টা বাকী। কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঐতিহাসিক ঈদগাহ মাঠে দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। এর মধ্যে ঈদের জামাত ঘিরে বর্ণিল সাজে প্রস্তুত করা হয়েছে ঐতিহাসিক দেশের বৃহত্তম ঈদগাহ ময়দান। মাঠের বাউন্ডারি ঘিরে আলোকসজ্জা, মাঠে মুসল্লিদের নামাজে দাড়ানোর জন্য মাঠে লাইনের দাগ কাটা, সিসি ক্যামেরা বসানো ও নিরাপত্তা চৌকিসহ সব ধরণের কাজের প্রস্তুতি প্রায় শেষ পর্যায়ে।
জেলা প্রশাসন ও ঈদগাহ মাঠ কমিটি সূত্রে জানা গেছে, করোনা প্রাদুর্ভাবের কারনে ২বছর পর এবার শোলাকিয়ায় ১৯৫তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত অনুষ্ঠিত হবে। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরও দেশের বৃহত্তম ঈদুল ফিতরের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। ঈদের মাঠে জায়নামাজ ও মাস্ক ছাড়া আর কোন কিছু না আনার পরামর্শ দিয়েছেন জেলা প্রশাসন। এরই মধ্যে জামাতের জন্য ঈদগাহ মাঠের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। এবার ঈদের জামাতে ইমামতি করবেন বিশিষ্ট ইসলামিক চিন্তাবিদ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসঊদ। সকাল ১০টায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে। জামাত শুরুর সাত, পাঁচ ও এক মিনিট আগে বন্দুকের ফাঁকা গুলির আওয়াজ করে সংকেত দেয়া হবে।
২০১৬ সালে ৭ জুলাই জঙ্গি হামলা ও মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে জেলা পুলিশের ছুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত করা হয়েছে। বৃহত্তম এই জামাতকে কেন্দ্র করে গত শুক্রবার থেকে কিশোরগঞ্জ শহরের আবাসিক হোটেল, ছাত্রাবাসসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ তল্লাশি ও বিশেষ নজরদারি করছে। ইতোমধ্যে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে পুলিশের একটি দল অস্থায়ী ক্যাম্প তৈরি করে মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব নিয়েছে।
গত বুধবার সকালে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ সহ জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা শোলাকিয়া মাঠের সার্বিক পরিস্থিতি পরিদর্শনে এসে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বিপিএম জানান, মাঠের নিরাপত্তার জন্য বোমা শনাক্ত ও নিষক্রিয়করণ দল শোলাকিয়া মাঠে মেটাল ডিটেক্টরের সাহায্যে বিশেষ অনুসন্ধান চালাবে। এছাড়া এবার ড্রোন সিকিউরিটির মাধ্যমে মাঠ ও আশপাশের এলাকায় বিশেষ নজরদারি করা হবে। পাশাপাশি শোলাকিয়া ময়দান ও আশপাশ সিসি ক্যামেরায় আওতায় আনা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় কঠোর নজরদারি করা হবে।
তিনি আরো জানান, পাঁচ প্লাটুন বিজিবির সদস্যসহ মাঠে আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সদস্যরা প্রস্তুত থাকবে। যাতে নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে থেকে দেশের দূর দূরান্ত থেকে আসা মুসুল্লিরা নির্বিঘেœ নামাজ আদায় করতে পারেন। এছাড়া হ্যান্ড মেটাল ডিটেক্টর নিয়ে মাঠের ২৮টি প্রবেশ পথে নিরাপত্তা কর্মীরা শরীর তল্লাশি করে মাঠে মুসল্লিদের প্রবেশের ব্যবস্থা করবে। ঈদের আগের দিন থেকে শহরে সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ রাখা হবে। এর পাশাপাশি পুলিশের গোয়েন্দা সংস্থা ও র‌্যাব সদস্যরা বিশেষ নজরদারি করবেন।
মাঠ কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শামীম আলম জানান, করোনা অতিমারির সংক্রমণ কমে যাওয়ায় এবার ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় এশিয়ার সর্ববৃহৎ ঈদের জামাতে মুসল্লির সংখ্যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি হবে। এ বছর লোকজনের সমাগম বেশি হবে এমন ধারণা থেকে ৫ স্তরের নিরাপত্তাসহ অন্যান্য ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হয়েছে। শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। ঈদের আগের দিন নামাজ আদায়ের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত মুসল্লিদের থাকা-খাওয়া ও ইফতার আয়োজনেরও ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে মাঠের সার্বিক নিরাপত্তার জোরদার করা হয়েছে। সবকটি চেক পোস্টে ২৫ জন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে মোবাইল টিম নিরাপত্তার ব্যাপারে কাজ করবে। এছাড়া বিজিপির জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগে পত্র দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে জানিয়েছে, শোলাকিয়ায় নির্বিঘেœ মুসুল্লিদের আসা-যাওয়ার সুবিধার্থে বাংলাদেশ রেলওয়ে দুটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। শোলাকিয়া স্পেশাল সার্ভিস নামে একটি ট্রেন ময়মনসিংহ রেল স্টেশনে থকে ঈদের দিন সকাল ৫টা-৫৫ মিনিটে ছেড়ে সকাল ৯ট-৫মিনিটে কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। অন্যটি ভৈরব থেকে সকাল ৬টায় ছেড়ে সকাল পৌনে ৯টায় কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে। উভয় ট্রেন দুটি দুপুর ১২টায় কিশোরগঞ্জ থেকে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে।
উল্লেখ্য, ১৮২৮ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে প্রথম ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়। সাত একর জমির ওপর মূল ঈদগাহটি প্রতিষ্ঠিত হলেও স্থান সংকুলানের অভাবে মাঠের চারপাশের খালি-জায়গা, বসতবাড়ির আঙিনা এবং রাস্তাঘাটে অগণিত মুসুল্লিকে নামাজ আদায় করতে হয়। এবার দেশ-বিদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে সাড়ে তিন লাখ ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জামাতে অংশ নেবেন বলে কমিটির লোকজন ধারণা করছেন।
এ মাঠের ইতিহাস পর্যালোচনা করে জানা যায়, শোলাকিয়া মাঠ এলাকার পূর্ব নাম ছিল ইচ্ছাগঞ্জ। শোলাকিয়া সাহেব বাড়ির পূর্ব পুরুষ শাহ সুফী মরহুম সৈয়দ আহম্মেদ ১৮২৭ সনের প্রথমে এ স্থানে সবপ্রথম একটি মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং পরে ১৮২৮ সনের শেষ ভাগে শোলাকিয়া মাঠের গোড়াপত্তন হয়।
পরবর্তীতে বাংলার বারো ভূঁইয়ার অন্যতম ঈশাখাঁ’র ৬ষ্ঠ বংশধর হয়বতনগরের শেষ জমিদার দেওয়ান মোঃ মান্নান দাদ খান ১৯৫০ সনে ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহের জন্য তার মায়ের অসিয়াত মোতাবেক ৪.৩৫ একর জমি ওয়াক্ফ করেন। দলিলের সূত্র মতে ঐ সময়ের আরও ২শ বছর আগে ১৭৫০ সন থেকেই এ ঈদগাহে দুটি ঈদের জামায়াত অনুষ্ঠিত হয়ছিলো বলে জানা যায়।
জনশ্রুতি রয়েছে, দীর্ঘকাল আগে একবার অংশগ্রহণকারী মুসল্লির সংখ্যা ১ লাখ ২৫ হাজার অর্থাৎ সোয়ালাখ মুসল্লি জামাতে অংশ গ্রহণ করেছিল। সেই থেকেই সোয়ালাখ থেকে সোয়ালাখিয়া উচ্চারণ; পরবর্তীতে কালের বিবর্তনে এ মাঠের নাম হয়েছে শোলাকিয়া।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana