শুক্রবার, ০১ Jul ২০২২, ১০:৪১ পূর্বাহ্ন
এম.এ হালিম, বার্তাসম্পাদক :
ঈদকে সামনে রেখে ভৈরবে ১০ হাজার পাদুকা কারখানার ৩ লক্ষাধিক মালিক-শ্রমিকসহ এ শিল্পের সাথে জড়িতরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। এখানকার উৎপাদিত পাদুকা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে ও রপ্তানী করা হচ্ছে। পর পর ২ বছর করোনার কারনে ব্যবসা বন্ধ থাকায় লোকসানের মুখে পড়ে এ শিল্প। এ বছর ও করোনার আশঙ্কায় অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কায় অনেক কারখানার মালিকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছিলো। কিন্ত করোনার ধাক্কা সামলে নতুন উদ্যমে কারখানা গুলো চালু হওয়ায় মালিক-শ্রমিক সবার মাঝে কর্মচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। প্রতিদিন শত কোটি টাকার পাদুকা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে।
ভৈরবে বাংলাদেশের অন্যতম বৃহত্তম পাইকারি পাদুকা মার্কেট ও কারখানাগুলোতে কর্মচাঞ্চল্য ও প্রাণ ফিরে পেয়েছে। ভৈরবে ছোট-বড় ১০ হাজার পাদুকা কারখানা গড়ে উঠেছে। কারখানাগুলোতে হাতে তৈরী পাদুকার পাশাপাশি এখন বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে মেশিনেও তৈরী হচ্ছে উন্নত মানের মান সম্মত পাদুকা। তাই দেশের বিভিন্ন জেলায় এখানকার পাদুকা সরবরাহের পাশাপাশি বিদেশে ও রপ্তানী হচ্ছে। প্রতিটি কারখানায় নারী-পুরুষ সমান তালে কাজ করে যাচ্ছেন। কেউ আপার তৈরী করছেন, কেউ বেনি কাটছেন, কেউ সুল তৈরী করছেন। ঈদকে সামনে রেখে এভাবেই ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। কারিগররা জানান কারখানায় কাজ করে যে টাকা উপার্জন হয় তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। গত ২ বছর কাজ না থাকায় অনেকেই ঋণ করে সংসার চালাতে হচ্ছে। সে ঋনের বোঝা এখনো বইতে হচ্ছে। দ্রব্য মূল্যের দাম বাড়ায় ইনকামের টাকা দিয়ে চলতে কষ্ট হয়। কারন বেতন না বাড়ায় এ অবস্থা।
মুন ষ্টার ফ্রুট ওয়ার এর মালিক স্বপন মিয়া জানান, করোনার কারনে অনেকেই গত ২ বছরে পুজিঁ হারিয়েছেন। পুজিঁর জন্য ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছেননা। সারা বছর তেমন একটা ব্যবসা থাকেনা শুধু রমজানের ঈদকে ঘিরেই ভালো মুনাফা হয়ে থাকে। তাই বাধ্য হয়ে ব্যাংক বা বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থায় লোনের আবেদন করে ও পাচ্ছেননা। সরকারের কাছে দাবী সহজ শর্তে যেন এ শিল্পে ঋণ দেয়।
এ বিষয়ে কারখানার মালিক উজ্জল মিয়া জানান প্রতি বছর ঈদ মৌসুমে পাদুকা তৈরীর কাচাঁমাল ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে ক্যামিক্যালসহ কাচাঁমালের দাম বাড়িয়ে দেয়ায় ব্যবসায় কাঙ্খিত লাভ হয়না। তাই ব্যবসায়ীদের দাবি গার্মেন্টস শিল্পের পরই পাদুকার স্থান। পাদুকা শিল্প থেকে সরকার প্রচুর পরিমানে রাজস্ব পেয়ে থাকে। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে শিল্প মন্ত্রণালয় ও সরকারের পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
এ ব্যাপারে ভৈরব পাদুকা কারখানা মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো: আল-আমিন মিয়া জানান, ভৈরবে ১০ হাজার কারখানায় ৩ লাখ মালিক-শ্রমিক কাজ করছে। ঈদকে সামনে রেখে প্রতিদিন ১শ কোটি টাকার পাদুকা দেশের বিভিন্ন জেলায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া বিদেশেও রপ্তানী করা হচ্ছে। পুজিঁর অভাবে অনেকেই ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারছেনা। তাই সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানান।
ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাদিকুর রহমান সবুজ জানান, এ শিল্পের সাথে জড়িতরা যাতে মুলধন না হারায় । সেজন্য এডিবির একটি প্রতিনিধি দল কারখানাগুলো পরিদর্শন করে গেছেন। তাছাড়া ব্যবসায়ীরা যেন সহজ শর্তে ঋণ পায় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হবে এবং শিল্প মন্ত্রীকে ও বিষয়টি অবহিত করা হবে।
তবে এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে সহজ শর্তে ঋণের পাশাপাশি সরকারের সুদৃষ্টি থাকা দরকার বলে মনে করছেন এ পেশার মালিক-শ্রমিকরা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কারকানাগুলো বন্ধ হয়ে গেলে কয়েক লাখ লোক বেকার হয়ে পড়বে।