শনিবার, ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন

পানির নিচে তলিয়ে গেছে হাওর কৃষকের স্বপ্ন

পানির নিচে তলিয়ে গেছে হাওর কৃষকের স্বপ্ন

বার্তা প্রধান:
কিশোরগঞ্জের ইটনা হাওরের ধনু ও বাউলা নদীর পাড়ের নিচু এলাকার প্রায় দুই শ’ একর জমির বোরো ধান তলিয়ে গেছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে বেশ কয়েকটি ফসল রক্ষা বাঁধ। ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কমিয়ে আনতে পানির নিচে থাকা কাঁচা-পাকা ধান আগে ভাগেই কাটতে শুরু করেছে এখানকার কৃষকরা। নতুন করে মাটি ভরাট করে পরিস্থিতি মোকাবিলায় হাওর উপজেলা ইটনার মসজিদ-মাদ্রাসা-মক্তব থেকে মাইকিং করে কৃষকদের জড়ো করা হচ্ছে। এমন খবরে মাটি কাটার কোদাল এবং বাঁধে ব্যবহার উপযোগী টিন-কাঠ ইত্যাদি নিয়ে ছুটছে বোরো চাষিরা।
জানা গেছে, উজান থেকে আসা অব্যাহত পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে গত শনিবার দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিশোরগঞ্জের হাওর; ইটনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের এরশাদনগর শিবির, বড়বাজার, চিড়া গাং, বলদা ফেরিঘাট, কুলিভিটা এলাকার চরাঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার উঠতি আধাপাকা ও কাঁচা বোরো জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে।
জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ভারতের আসামের চেরাপুঞ্জিতে অতিরিক্ত বৃষ্টি হওয়ায় ধনু ও বাউলা নদীর পানি বেড়ে গেছে। সেই ঢলের কারণে সুনামগঞ্জ হয়ে প্রবল বেগে পানি ঢুকছে কিশোরগঞ্জে ইটনা হাওরের এ দু’টি নদী দিয়ে। এ ছাড়া ধনু ও বাউলা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় হাওরের ফসল রক্ষা বাধ হুমকির মুখে। কোন কোন জায়গায় ইতোমধ্যে বাঁধে ফাটল ধরেছে। এই অবস্থায় কৃষকেরা দ্রুত ক্ষতিগ্রস্থ বাঁধ মেরামত করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে আগাম বন্যার সম্ভাবনা নেই।
এদিকে হাওরের একমাত্র ফসল বোরো ধান পাকতে আরও সময় লাগবে। এমন পরিস্থিতিতে উজানের ঢল এসে ফসল ডুবে যাওয়ায় মাথায় হাত পড়েছে অনেক কৃষকের।
ইটনা উপজেলার কৃষক জালাল মিয়া বলেন, ‘নদীর পাড়ে আমার দুই একর জমির ধান মাত্র পাকতে শুরু করেছে। এমন সময় আমার সব ধান এখন পানির নিচে। লোকজন নিয়ে কাঁচা পাকা ধান কোনোমতে কাটছি। খেতের অধিকাংশই ধান নষ্ট হয়ে গেছে।’
এ ব্যাপারে ইটনা থেকে মুঠোফোনে সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সোহাগ মিয়া জানান, ইতোমধ্যে কয়েক হাজার হেক্টর বোরো ফসলের জমি পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এ ছাড়া হালালের বাঁধ নামে ফসল রক্ষা বাঁধসহ জুর বিলের বাঁধ ও জিউলের বাঁধেও পাহাড়ি ঢলের প্রবল ¯্রােত আঘাত করছে।
এ সময় তিনি দাবি করেন, হালালের বাঁধ উপচে পানি প্রবেশ করতে পারলে এ উপজেলার সর্বনাশ হয়ে যাবে। আর এ জন্য নতুন করে মাটি ভরাট করে হালালের বাঁধসহ অন্যান্য বাঁধ রক্ষায় মসজিদ, মাদ্রাসা ও মক্তব থেকে মাইকিং করে বোরো চাষিরা আহ্বান জানানো হচ্ছে।
কিশোরগঞ্জের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপপরিচালক (শস্য) মো. সাইফুল আলম বলেন, মুল হাওরের বোরো জমিতে ্কনো পানি উঠেনি। ফসল রক্ষা বাঁধ পানি ছুঁতে পারেনি। ইটনা হাওরের নদীর চরের ২০০ একর ধানের জমি প্লাবিত হয়েছে। এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ ফসলি জমি তলিয়ে গেছে তা নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্নয়ের কাজ চলছে।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মহিউর রহমান এ বিষয়ে বলেন, ‘উজানের ঢলে কিশোরগঞ্জ হাওরের ধনু ও বাউলা নদীর পানি বেড়ে গেছে। তবে ফসল রক্ষা বাঁধ থাকায় মূল হাওরে এখনো পানি ঢুকতে পারেনি। বাঁধের যে অংশগুলো ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে, সেসব অংশে বাড়তি নজরদারি রয়েছে আমাদের।’
উল্লেখ্য, চলতি বোরো মৌসুমে কিশোগঞ্জের হাওরে ১লাখ ৪ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana