রমজান মাস এমন একটি বরকতপূর্ণ মাস, যে মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের থেকে অনেক বেশি। এ মাসে বান্দার জন্য রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের দ্বার উন্মুক্ত করা হয়। রমজানের প্রথম রাত যখন আগমন করে, তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। শুধু কী তাই? এ মাসে বিতাড়িত অভিশপ্ত শয়তানকেও শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়। যেমনটি হাদিসে এসেছে যে, হযরত আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত- তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজান মাসের প্রথম রাত আগমন করে, তখন শয়তান ও অবাধ্য জিনদেরকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। অতঃপর একটি দরজাও আর খোলা হয় না। আর এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়। অতঃপর একটি দরজাও আর বন্ধ করা হয় না। এ সময় একজন আহ্বানকারী আহ্বান করতে থাকেন। ওহে পুণ্যের অন্বেষণকারীগণ! পুণ্য অর্জনে সামনে অগ্রসর হও। ওহে মন্দের অন্বেষণকারীগণ! মন্দ কাজ থেকে বিরত হও। কেননা, মহান আল্লাহ তায়ালা এ পবিত্র মাসে অনেককে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দান করেন।’ (তিরমিজি : হাদিস ১৮৬৪)
রমজান মাসের আগমনী বার্তা সম্পর্কে হজরত সালমান ফারসি (রা.) বলেন, একবার রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাসের শেষ দিন আমাদের উদ্দেশে ভাষণ প্রদান করেন। অতঃপর তিনি বললেন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের ওপর এমন একটি মহান ও বরকতপূর্ণ মাস ছায়া বিস্তার করেছে। যাতে হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম একটি মহামান্বিত রজনী রয়েছে। এ মাসে মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রোজাকে ফরজ এবং রাতে নামাজ আদায় করাকে নফল করেছেন। যে ব্যক্তি এ মাসে আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় একটি নফল কাজ করবে, সে ওই ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে, যে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায় করেছে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে, সে ওই ব্যক্তির সমান সওয়াব পাবে, যে অন্য মাসে সত্তরটি ফরজ আদায় করেছে। সুতরাং রমজান মাস ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান হলো একমাত্র জান্নাত। এটা পারস্পরিক সহানুভূতির মাস। এটা এমন এক বরকতপূর্ণ মাস, যাতে মুমিনের রিজিক বৃদ্ধি করা হয়। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে শুধু এক চুমুক দুধ অথবা একটি খেজুর অথবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবে, এটা তার জন্য গুনাহ মাফের মাধ্যম হবে এবং নিজেকে জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তির কারণ হবে। আর তাকে রোজাদার ব্যক্তির সমপরিমাণ সওয়াব প্রদান করা হবে। এতে রোজাদারের সওয়াব থেকে কোনো অংশ কম করা হবে না। পক্ষান্তরে, যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো রোজাদারকে পরিতৃপ্তির সঙ্গে ইফতার করাবে। আল্লাহ তায়ালা তাকে আমার হাউজে কাউসার হতে পানি পান করিয়ে পরিতৃপ্ত করাবেন। যার ফলে সে জান্নাতে প্রবেশ করা পর্যন্ত আর তৃষ্ণার্ত হবে না। আর এটা এমন মাস যার প্রথমভাগ রহমত, মধ্যভাগ ক্ষমা এবং শেষভাগে আছে জাহান্নাম হতে মুক্তি। আর যে ব্যক্তি এ মাসে তার অধীনে চাকর-বাকরের কাজের ভার হালকা করে দেবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম হতে মুক্তি দান করবেন। (মিশকাত : হাদিস ১৮৬৮)। সুতরাং চিরস্থায়ী জান্নাত পেতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে এ মাসে ধৈর্যের সঙ্গে বেশি বেশি পরিমাণে আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগি করতে হবে।
এ ছাড়াও রোজার যথাযথ গুরুত্ব বোঝাতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজানের এক দিনের রোজা কোনো ওজর বা রোগ ব্যতীত ভেঙে ফেলবে, সারা জীবনের রোজায় তার ক্ষতিপূরণ হবে না- যদি সে সারা জীবনও রোজা রাখে।’ (মিশকাত : হাদিস ১৯১৬)। সুতরাং কোনো কারণ ছাড়া অবহেলা করে রোজা ভেঙে ফেলা অথবা শরীর সুস্থ থাকা সত্ত্বেও রোজা পালনে অনীহা প্রকাশ করা মারাত্মক শাস্তির কারণ। আল্লাহ আমাদেরকে রমজানের রোজার যথাযথ হক আদায় করে রোজা রাখার তৌফিক দান করুন। (আমিন)