সোমবার, ০৫ Jun ২০২৩, ০৩:১৫ পূর্বাহ্ন
মুক্তি সংগ্রামের শুরু এবং তার আগে থেকেই বাংলাদেশের সঙ্গে অ্যান্থনী মাসকারেনহাসের নিবিড় যোগাযোগ। পাকিস্তানে বসবাসকারী দীর্ঘ অভিজ্ঞতাসম্পন্ন সাংবাদিক হিসেবে শেরে বাংলা এ.কে. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, খাজা নাজিমুদ্দিন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ দেশের অন্যান্য প্রতিটি উল্লেখযোগ্য নেতার সঙ্গেই ছিল তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ১৯৭১ সালে অ্যান্থনী মাসকারেনহাসই প্রথম সাংবাদিক যিনি পাকিস্তান থেকে পালিয়ে গিয়ে লন্ডনের দি সানডে টাইমস্ পত্রিকায় তখনকার বাংলাদেশ ভূখন্ডে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর নির্মম স্বজন হত্যার কাহিনী সবিস্তারে লিখে বিশ্ব জনমতের সামনে তুলে ধরে। তার সেই নিবন্ধ এবং পরবর্তী রচনাগ্রন্থ ‘দ্যা রেইপ অব বাংলাদেশ’ বিশ্বব্যাপী শুধু তুমুল আলোড়ন সৃষ্টি করেনি, ব্যাপক স্বীকৃতিও লাভ করেছিল। এমন কি পাকিস্তানেও। যার ফলে বাংলাদেশের অনুকূলে আন্তর্জাতিক/বিশ্ব জনমতের জোয়ার ঘোরাতেও সাহায্য করেছিল। ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের স্বজন হত্যার সত্যনিষ্ঠ প্রতিবেদনের জন্য অ্যান্থনী মাসকারেনহাস গ্রানাডা টিভি সংস্থার জেরাল্ড বেরি পুরস্কার এবং ইন্টারন্যাশনাল পাবলিশিং কোম্পানীর বিশেষ পুরস্কার লাভ করেন। লন্ডনের সানডে টাইমস্ পত্রিকায় সুদীর্ঘ ১৪ বছর সক্রিয় কর্মজীবনের শেষে বর্তমানে তিনি ফ্রি ল্যান্স লেখক হিসাবে কাজ করছেন।
অ্যান্থনী মাসকারেনহাস বাংলাদেশের মানুষদের জন্য অসীম ভালবাসা এবং গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহকারে একটা বিশেষ কর্তৃত্বপূর্ণ ভঙ্গীতে লেখেন। সুপ্রতিষ্ঠিত কর্মজীবন, ঘরবাড়ী, স্ত্রী, পাঁচ ছেলেমেয়ে এমন কি নিজের সোনালী ভবিষ্যতকে জলাঞ্জলি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের স্বজন হত্যা বিষয়ে প্রকৃত সত্যকে উদ্ঘাটন করার জন্য। আর এই কারণেই এই বইয়ে গভীর দু:খের সঙ্গে লেখা হয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। অ্যান্থনী মাসকারেনহাসের আত্মকথন-যিনি আমাদের প্রতিটি বাঙালীর সঙ্গেই; আমাদের সাধের সোনার বাংলার স্বপ্নগড়ার একজন অংশীদার। ১৯৯৬ সালের ৬ই ডিসেম্বর অ্যান্থনী মাসকারেনহাস হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক, একুশে টাইমস্