রবিবার, ২৮ মে ২০২৩, ১১:০৬ অপরাহ্ন
আগুন আমিন, পাকুন্দিয়া:
চোখের জলেই যেন ভরে উঠেছিল ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার এগারসিন্দুরে অবস্থিত বেবুদ রাজার জলশূন্য পুকুর। ইতিহাস থেকে জানা যায়, ১৬শতকে কোচ সামন্ত রাজ রাজা আজাহাবাকে যুদ্ধে পরাস্ত করে রাজা বেবুদ এগারসিন্দুর এলাকাটিকে তার করায়ত্তে আনার পর এগারসিন্দুরে তার রাজত্বের রাজধানী গড়ে তোলেন। সেসময় এলাকায় একবার পানি সংকট দেখা দেয়। ফলে প্রজাদের পানি সংকট নিরসনে ৪৩২ শতাংশ জমি নিয়ে এই সুবিশাল পুকুরটি খনন করেন রাজা বেবুদ। কিন্তু, অনেক গভীর হওয়া সত্ত্বেও কোনোভাবেই পুকুরটিতে পানি উঠছিল না। এ নিয়ে রাজা বেবুদ খুবই চিন্তিত ছিলেন। রাজা বেবুদ একদিন ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন দেখেন, তার স্ত্রী সম্পা রানী পুকুরে নামতেই পুকুরটি জলে ভরে গেছে। এমন স্বপ্ন; রাজা বেবুদকে ভীষণ ভাবিয়ে তোলে। সকালে নাস্তার টেবিলে বসে রাজা বেবুদ তার এই স্বপ্নের কথা রানীর কাছে বলেন। রাজার এই স্বপ্নের কথা শোনা মাত্রই রানী অধীর অগ্রহে পুকুরে নামতে রাজার অনুমিত চাইলেন। ফলে রাজার আদেশে রাজ্যে বিশাল এক আয়োজন করা হয় এবং বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে আনন্দ উল্লাস করে প্রাসাদ থেকে রানীকে পুকুর ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। এসময় রাজ্যের সমস্ত মানুষ পুকুরের চার পাশে কৌতূহল নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। পুকুরে নামার আগে বেবুদ রাজার স্ত্রী সম্পা রানী সবার উদ্দেশ্যে হাত নাড়িয়ে বলেন, ‘রাজার স্বপ্নোমতে আমি এই পুকুরে নামলে যদি তাতে জল ওঠে এবং এই রাজ্যের প্রজাদের পানি সংকট নিরসন হয়, তাহলে এই পুকুরে আমি নিজেকে সঁপে দিতেও প্রস্তুত।’ এই বলে রানী পুকুরে নামতে থাকেন। অতঃপর, এক কদমে হাসল পুকুর দুই কদমের পরে পায়ের তলায় জল উঠতেই হাসে সবাই পাড়ে। বাড়ে কদম, ভরে জলে হাটু-কোমর-গলা বলে রানী, দেখে রেখো আমার ছেলে-পুলা ছেলেরা তার কেঁদে ওঠে মা-মা-মা এই বলে মনে হয় যেন পুকুর ভরছে রাজার চোখের জলে রানীকে তখন শুধায় রাজা, ফিরে এসো মোর পানে ফিরল না আর রাজ্যের রানী সোনার সিংহাসনে! সম্পা রানী পাড়ে থাকা সবাইকে হাত নাড়িয়ে বিদায় সম্ভাষণ জানাতে জানাতে ধীরে ধীরে পুকুর জলে তলিয়ে গেলেন। এসময় সকল বাদ্যযন্ত্র থেমে যায়। শুধু ভায়োলিনে বাজতে থাকে কাফি রাগে রহস্যময় করুণ সুর। সেই থেকে পুকুরটি ‘বেবুদ রাজার পুকুর’ নামে পরিচিত। রহস্যময় পুকুরটি এক নজর দেখার জন্য একসময় দেশের বিভিন্ন যায়গা থেকে প্রতিদিন দর্শনার্থীরা এসে ভীড় করতো। তবে এখন দর্শনার্থীর সংখ্যা কমে এসেছে। সরকারী কোন উদ্যোগ না নেয়ায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারাতে বসেছে এগারসিন্দুরের এ ঐতিহ্যবাহী রহস্যময় বেবুদ রাজার পুকুর।