বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪৯ অপরাহ্ন

এক ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টারের কথা বলছি : দাউদ ইব্রাহিম

এক ভয়ঙ্কর গ্যাংস্টারের কথা বলছি : দাউদ ইব্রাহিম

ভারতের একমাত্র মাফিয়া ডন ও গডফাদার দাউদ ইব্রাহিম মহারাষ্ট্র প্রদেশে ১৯৫৬ সালের ২৭ শে ডিসেম্বর এক বনেদী মুসলমান পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা ইব্রাহিম কাখসার ছিলেন বোম্বে পুলিশের হেড কনস্টেবল ও সৎব্যক্তি। তাই দাউদের শৈশব কাটে বোম্বে শহরের অন্ধকার অলিগলিতে বাজে ও হিং¯্র প্রকৃতির ছেলেদের সাথে। তাই দ্রুত বখাটে হয়ে যায়। কিশোরকালে রেলষ্টেশনে টাকা ছিনতাই করার সময় পিতা ব্যাপক ধোলাই দেন কিন্তু পরবর্তীকালে সেই ছেলে ইন্টারপোলের মোস্ট ওয়ান্টেডভূক্ত আসামী এবং নাম্বার ওয়ান মাফিয়া ডন হিসেবে শুধু ভারত নয়, পাকিস্তান, দুবাইসহ সমগ্র মধ্যপ্রাচ্যে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। তখন ভারতের অন্ধকার জগতের মাফিয়াদের অবাধ বিচরণ ছিল বোম্বে কেন্দ্রীক। আর সেখানে উড়তে থাকা কালো টাকার লোভ আর অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি দাউদকে মুগ্ধ ও উৎসাহিত করে। এভাবে অল্পসময়েই এক দুর্ধর্ষ গ্যাংস্টার হিসাবে নিজেকে আত্মপ্রকাশ করে।

সেই সময়টায় বোম্বের আন্ডারওয়াল্ড নিয়ন্ত্রণ করত করিমলালা গ্যাং আর দাউদ ও তার ভাই সামির ইব্রাহিমকে নিয়ে করিম লালা গ্যাংয়ের হয়ে খুন-খারাপী, জাল নোটের ব্যবসা, মোটা চাঁদাবাজী প্রভূতি অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এক সময় দাউদ ইব্রাহিম নিজেই ৫ হাজার জন সন্ত্রাসী যুবককে নিয়ে ডি(উ) কোম্পানী গড়ে তোলেন এবং নিজে করিমলালা গ্যাংকে ধ্বংস করে দেয়। আর ডি কোম্পানি হয়ে উঠে বোম্বের অন্ধকার জগতের এক আতংকের নাম। ডি কোম্পানি তখনকার প্রতিদ্বন্ধী বাসু দাদার গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীদের লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে একের পর এক হত্যা করে কিংবা এলাকা ছাড়া করে। তাই এক বনের এক সিংহ দাউদ ইব্রাহিম রিয়েলএস্টেট ব্যবসা, শিপিং ব্যবসা, চাঁদাবাজী, ঠিকাদারী, অবৈধ অস্ত্র ব্যবসাসহ সকল অনৈতিক কর্মকান্ডের মাধ্যমে প্রচুর ধন সম্পদের মালিক বনে যায়। ক্ষমতার মোহে দাউদ ভারতে অবৈধ অস্ত্রের কারখানাও তৈরী করে। আশির দশকের মাঝামাঝিতে বোম্বে পুলিশের এনকাউন্টার থেকে বাঁচতে দাউদ দুবাই পাড়ি জমায়। এক সময় ধনবান দাউদ বোম্বের চলচ্চিত্র শিল্পে বিপুল অংকের টাকা বিনিয়োগ করে এবং তার পছন্দমত সুন্দরী নারীদের সঙ্গভোগ করে। তৎকালীন নায়িকা মন্দাক্ষিনীকে জোরপূর্বক বিয়েও করে। দাউদের জীবন-যাপন ছিল বিলাসবহুল এবং তার বাড়ির নাম ছিল ‘হোয়াইটহাউজ’।

দাউদের চার বোন ছিল। প্রত্যেকেই পারিবারিক জীবনে সুখী ছিল। দাউদ মোটামুটি স্থায়ীভাবে দুবাই পাড়ি জমালে তার শত্রুদের অন্যতম অরুন গ্যাং প্রতিশোধ নেওয়ার উদ্দেশ্যে দাউদের ছোট বোন হাসিনা পার্কারের জামাই ইসমাইলকে হত্যা করে। ইসমাইল প্রথম জীবনে ফিল্মের জুনিয়র আরটিষ্ট আর পরবর্তীতে হোটেল ব্যবসায়ী ছিলেন। অপরাধ জগতের সাথে তার কোন সম্পর্কই ছিলনা। ইসমাইলের মৃত্যুর পর হিং¯্র দাউদের নির্দেশে ছোটা রাজন ১৯৯৩ সালে প্রথম ভারতে রাইফেল ব্যবহার করে এবং আদালত প্রাঙ্গনে সাক্ষীকে জনসম্মুখে হত্যা করেন। স্বামী ইসমাইল হত্যার পর হাসিনা নি:সঙ্গ হয়ে পড়ে ও প্রতিশোধ স্পৃহায় দাউদের মতো অপরাধ জগতে পা রাখে। জুটে যায় ভারত ব্যাপী দাউদের সকল সন্ত্রাসীরা হাসিনার সাথে। তখন ১৯৯৩ সালে গুজরাট দাঙ্গার বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্যে বসে দাউদ মুম্বাইয়ে বোমা বিষ্ফোরণের মাধ্যমে ৩১৮ জনকে হত্যা করে। এর মধ্যে ৩০৮ জনই ছিল সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারী। ফলশ্রুতিতে বোম্বেতে হাসিনা পার্কারের সন্ত্রাসী বাহিনীর প্রতিপত্তি আরও বৃদ্ধি পেল এবং তিনি আন্ডারওয়াল্ডে ‘আপা’ নামে পরিচিত পেলেন। তিনিও প্রায় এক দশকের বেশী সময় ধরে বোম্বের অস্ত্র ব্যবসা, রিয়েলএস্টেট বিজনেজ, ঠিকাদারী, ডিস ব্যবসাসহ সকল অপকর্ম দেদারচ্ছে চালিয়ে গেছেন। হাতিয়ে নিয়েছেন নির্দিষ্ট অংকের ভাগ। হাসিনা পার্কার এতই শক্তিশালি হয়ে উঠেছিলেন যে, তার বিরুদ্ধে ৮৮টি মামলা থাকা সত্ত্বেও মাত্র এক দিন বোম্বে পুলিশের ডিবি কার্যালয়ে উপস্থিত হয়েছিলেন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সতের বছর বয়সী তার একমাত্র ছেলে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলে ‘আপা’ স্বেচ্ছায় নিরব ও নিস্তব্ধ হয়ে যান। পরে গ্যাংয়ের হাল ধরেন তার ছোট ভাই। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দাউদ ইব্রাহিম দুবাই কিংবা পাকিস্তানের করাচিতে বসবাসরত। আর পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আই এসএস এর সাথে দাউদ ইব্রাহিমের দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। সর্বশেষ পারিবারিক জীবন সমন্ধে জানা যায়, তার মেয়ের সঙ্গে পাকিস্তানের ক্রিকেট তারকা জাভেদ মিয়াদাদের ছেলের বিয়ে সম্পন্ন হয়।

শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক

একুশে টাইমস্ বিডিডটকম

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana