মঙ্গলবার, ২৪ Jun ২০২৫, ০৩:৫২ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার:
কিশোরগঞ্জে এক লাখ টাকা ঘুষ না দিলে এক এমপিওভুক্ত মাদ্রাসা শিক্ষিকার বেতন বন্ধ করে দেয়ার হুমকির অভিযোগ উঠেছে ওই মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফের বিরুদ্ধে।
গত রোববার (৬ আগস্ট) রাতে ওই শিক্ষিকার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে শরিফ কল করে ১ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে শিক্ষিকার বেতন বন্ধসহ বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করবে। গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) মাদ্রাসার অফিস স্টাফদের সামনে ওই শিক্ষিকাকে ও তাঁর স্বামীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন মাদ্রাসার সভাপতি শরিফ। বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে গত বুধবার (১৬ আগস্ট) জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটি ইউনিয়নের মাদ্রাসা-ই-মুসলিম মিল্লাত দাখিল মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষক (বাংলা) রোকেয়া আক্তার।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালে এনটিআরসিএ কর্তৃক নিয়োগ প্রাপ্ত হয়ে ওই মাদ্রাসায় যোগদান করেন শিক্ষিকা রোকেয়া আক্তার। যোগদান করার সময় মোটা অংকের ঘুষ দাবি করেন মাদ্রাসার সভাপতি মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ। ওই সময় ঘুষ না দেয়ায় তাঁর এমপিও এর আবেদন কপি প্রথম মাসে পাঠাতে গড়িমসি করেন। দ্বিতীয় মাসেও প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র না দেয়ায় তাঁর এমপিও এর আবেদন বাতিল করে দেয়া হয়। ওই সময় গণমাধ্যমকর্মীদের সহযোগিতা চাইলে তাঁরা তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে জানতে পারেন, এই প্রতিষ্ঠানে যে চারজন সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন তাদের মধ্যে দুইজন যোগদান করেছেন। বাকি দুইজন যোগদান করেননি। তাদের জায়গায় অবৈধ ভূয়া দুইজনকে নিয়োগ দেয়া হয়। এদের মধ্যে একজন সাবিকুন্নাহারের নামে যোগদান করেন। যোগদানের প্রথম মাসেই সাবিকুন্নাহারের বেতন করিয়ে আনেন সভাপতি শরিফুল ইসলাম।
এসব ঘটনা জানাজানি হবার পর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ভুয়া নিবন্ধনধারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করেন। এর দুই মাস পর রোকেয়া এমপিওভুক্ত হয়। এরপর থেকেই রোকেয়াকে সভাপতি শরিফের নির্দেশে তাঁর বিষয়ের বাইরে একাধিক ক্লাস নিতে বাধ্য করা হয়। রোকেয়ার অভিযোগের ভিত্তিতেই নাকি অবৈধ প্রার্থীরা চাকরি করতে পারেনি তাই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রোকেয়াকে হেয় করার চেষ্টা করা হয়েছে। তারই প্রেক্ষিতে রোকেয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে বিষয়টি মৌখিকভাবে জানান। পরে তিনি প্রতিষ্ঠানের সুপারকে সমাধান করে দিতে বলেন। এরই জেরে প্রায় ১৪ মাস পর গত রোববার (০৬ আগস্ট) রাতে রোকেয়ার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে মাদ্রাসার ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরিফ কল করে ১ লক্ষ টাকা দাবি করেন। টাকা না দিলে বেতন বন্ধসহ নানা ধরণের ক্ষতিসাধন করবে বলে জানান। এর চারদিন পর গত বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) অফিস স্টাফদের সামনে রোকেয়া ও তাঁর স্বামীকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করেন মাদ্রাসার সভাপতি শরিফ।
প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে যে অবৈধ প্রার্থী নিয়োগ দিয়েছিলেন রোকেয়ার কারণে নাকি তারা চাকরি করতে পারেনি। তাই রোকেয়াকে হয়রানি করবেন বলে হুমকি দেন এবং স্বামীর কাছে তাঁর মাধ্যমে এক লক্ষ টাকা দাবি করেন। এই টাকা না দিলে আগস্ট মাসের বেতন বন্ধ করে দিবেন বলে হুমকি দেন সবার সামনে। আগামী এক মাসের মধ্যে ১ লাখ টাকা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে অন্যথায় আমার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়াসহ বেতন বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়েছে। ভুক্তভোগী রোকেয়া আক্তার বলেন, মাদ্রাসার সভাপতি শরিফ নিয়োগ হওয়ার পর থেকে বিভিন্নভাবে আমাকে হয়রানী করে আসছেন। আমার নিয়োগের সময় টাকা দাবী করে ও হুমকি দেয়। মাদ্রাসার সভাপতি আমাকে বলেন ‘আমার কাছে সব ক্ষমতা। আমি ইচ্ছে করলে সব করতে পারবো।’ টাকা না দেয়া পর্যন্ত তিনি ঝামেলা করে যাবেও বলেন। ভুক্তভোগী শিক্ষিকার স্বামী খায়রুল আলম ফয়সাল বলেন, আমি আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, আমার স্ত্রী অভিযোগ করেছে, আশা রাখী দুর্নীতিবাজ সভাপতির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। আমার কাছে টাকা দাবী করার পর আমি টাকা দিতে অসম্মতি জানালে আমার সাথেও অসধাচরন করেন মাদ্রাসার সভাপতি।
অভিযুক্ত ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ শরিফুল ইসলাম শরিফ বলেন, রোকেয়ার কাছে আমি টাকা চাইতে যাবো কেনো? এ বিষয়ে আমি কিছুই বলতে পারবো না। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ বলেন, রোকেয়া আক্তারের লিখিত অভিযোগটি পেয়েছি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।