সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৬:০৪ অপরাহ্ন

ইউক্রেনের ছয় অঞ্চলে ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি

ইউক্রেনের ছয় অঞ্চলে ১২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি

একুশে ডেস্ক:
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে ছয়টি অঞ্চল হলো- রাজধানী কিয়েভের দুটি অংশ, খারকিভ, চেরনিহিভ, সুমি ও মারিউপোল। এসব শহর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য ‘মানবিক করিডোর’ বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত খোলা ছিল।
এদিকে সুমি শহরে রুশ বিমান হামলায় ২২ বেসামরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে কিয়েভ। ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি দাবি করেছেন, পুতিনকে না থামাতে পারলে বিশ্বের কোনো স্থান আর নিরাপদ থাকবে না। বিপরীতে পুতিন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছেন।
আর তুরস্কে আগামীকাল বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিতব্য ইউক্রেন ও রাশিয়ার বৈঠক নিয়ে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তার আশা, এ বৈঠক একটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ দ্বার উন্মোচন করবে।
লোকজন সরিয়ে নিতে যুদ্ধবিরতি ও মানবিক করিডোর : ইউক্রেনের ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী ইরিনা ভেরেসচুক বলেন, যুদ্ধে সবচেয়ে বিপর্যস্ত অবস্থায় থাকা ছয়টি অঞ্চলের বেসামরিক মানুষদের পালানোর সুযোগ দিতে ১২ ঘণ্টার জন্য একটি যুদ্ধবিরতি করতে রাজি হয়েছে রাশিয়া।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, ওই ছয়টি অঞ্চলের কয়েক লাখ লোক লড়াইয়ের কারণে খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ ও ওষুধের অভাবের মধ্যে আটকা পড়েছে। উত্তর-পূর্বের সুমি শহরের মেয়র বলেছেন, সেখান থেকে লোকজন ইতোমধ্যেই গাড়িতে করে বেরিয়ে যেতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরু হয় ২৪ ফেব্রুয়ারি। রাশিয়ার সেনাদের ঠেকাতে দুই সপ্তাহ ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে ইউক্রেন। যুদ্ধে সেনাদের সঙ্গে অংশ নিয়েছে ইউক্রেনের বেসামরিক মানুষও। রাশিয়ার বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে অংশ না নিলেও নিষেধাজ্ঞা দিয়ে দেশটিকে ঘায়েল করতে চাইছে পশ্চিমারা। রাশিয়ার আগ্রাসন ঠেকাতে পৃথিবীর বহু দেশে বিক্ষোভ চলছে। এমনকি রাশিয়ার নাগরিকরাও এতে অংশ নিচ্ছে।
সুমিতে ২২ বেসামরিক নিহত : রাশিয়ার বিমান হামলায় ইউক্রেনের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় সুমি শহরে তিন শিশুসহ অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন আঞ্চলিক গভর্নর দিমিত্রো জাইভিতস্কি। তিনি জানিয়েছেন, স্থানীয় সময় মঙ্গলবার সারারাত ধরে একটি আবাসিক এলাকায় বোমা ফেলেছে রুশ বাহিনী। রাতে তিনটি বোমা হামলা চালানো হয়। এ ঘটনাকে তিনি গণহত্যা বলে বর্ণনা করেছেন।
হামলায় ছয়টি বাড়ি ধ্বংস হয়ে যায়। আরও অন্তত ২০টি বাড়ি আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। শুধু একটি বাড়িতে নয়জন নিহত হয়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে সুমি থেকে প্রায় ৫ হাজার বেসামরিক নাগরিককে সফলভাবে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেন। রাশিয়ার আক্রমণ থামাতে মানবিক করিডোর চালু হওয়ার পর ওইসব নাগরিককে সরিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়েছিল।
পুতিনকে নিয়ে ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডির মন্তব্য : যুদ্ধ শুরুর পর প্রথমবারের মতো বিবৃতি দিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরেছেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি ওলেনা জেলেনস্কা। বুধবার বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ এনে যুদ্ধের ভয়াবহতা, বিশেষ করে নারী ও শিশুর প্রাণহানি নিয়ে কথা বলেন।
ওলেনা বলেন, পুতিন পারমাণবিক যুদ্ধের হুমকি দিচ্ছেন। যদি তাকে থামাতে না পারি, তা হলে বিশ্বে আমাদের কোনো নিরাপদ স্থান থাকবে না। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত যেসব শিশু হতাহত হয়েছে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেওয়া ওই বিবৃতিতে তাদের নাম প্রকাশ করেছেন ইউক্রেনের ফার্স্ট লেডি। সাহায্যের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং ইউক্রেনের মানুষকে আশ্রয় দেওয়ার জন্য প্রতিবেশী দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানান ওলেনা জেলেনস্কা। কিন্তু স্বামী প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির মতো তিনিও ইউক্রেনে নো ফ্লাই জোন ঘোষণার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানান। তবে ন্যাটো এমন আহ্বানে সাড়া দেয়নি।
গণহত্যার অভিযোগ পুতিনের : ইউক্রেনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ এনেছেন পুতিন। একই সঙ্গে তিনি বলেছেন, ইউক্রেনে তার যুদ্ধের উদ্দেশ্য হলো দেশটির সরকারের ‘অসামরিকীকরণ ও নাৎসি মতাদর্শ থেকে তাদের বের করে নিয়ে আসা।’ পুতিনের দাবি, ডোনেস্ক ও লুহানস্ক অঞ্চলের রুশভাষী মানুষের ওপর ‘গণহত্যা’ চালাচ্ছে ইউক্রেন।
আগামীকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কে দুপক্ষের বৈঠক : আগামীকাল বৃহস্পতিবার তুরস্কের আনাতোলিয়ায় ইউক্রেন ও রাশিয়ার এই বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। এতে নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ এবং ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রি কুলেবা।
বৈঠক নিয়ে আশাবাদের কথা জানিয়েছেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোগান। তার আশা, এ বৈঠক একটি ‘স্থায়ী যুদ্ধবিরতির’ দ্বার উন্মোচন করবে। ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর এই প্রথমবারের মতো বৈঠকে বসছেন দেশ দুটির পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। মধ্যস্থতাকারী দেশের প্রতিনিধি হিসেবে তুর্কি পররাষ্ট্রমন্ত্রীও এতে অংশ নেবেন।
তুর্কি সংবাদমাধ্যম ডেইলি সাবাহ জানিয়েছে, বুধবার রাজধানী আঙ্কারার পার্লামেন্ট ভবনে দেশটির ক্ষমতাসীন দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টির (একে পার্টি) এক সভায় দেওয়া ভাষণে ইউক্রেন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন এরদোগান।
তিনি বলেন, ইউক্রেনের বেসামরিক নাগরিকদের দুর্ভোগের অবসান ঘটানোকে তুরস্ক তার দায়িত্ব হিসেবে বিবেচনা করে। এ বিষয়ে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপনের জন্য আঙ্কারা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ধর্ম, উৎপত্তি বা চামড়ার রঙের ভিত্তিতে নিপীড়িত মানুষের প্রতি বৈষম্যমূলক মানসিকতার সঙ্গে মানবতা বা সভ্যতার কোনো সম্পর্ক নেই। তুরস্ক কখনও ভাষা, ধর্ম বা চামড়ার রঙের ভিত্তিতে যুদ্ধ ও নিপীড়ন থেকে পালিয়ে আসা মানুষের ওপর লেবেল লাগিয়ে দেয়নি।
ইউক্রেন ও রাশিয়া দুদেশেরই মিত্র হিসেবে পরিচিত ন্যাটো জোটের সদস্য তুরস্ক। কৃষ্ণসাগরে উভয় দেশের সঙ্গেই তুরস্কের পানিসীমা রয়েছে। আঙ্কারা নিজে রাশিয়ার কাছ থেকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে। অন্যদিকে তুরস্কের কাছ থেকে কেনা ড্রোন দিয়ে রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে ইউক্রেন। চলমান যুদ্ধে খোলাখুলি ইউক্রেনের পক্ষ নিয়েছে আঙ্কারা। সম্প্রতি ভূমধ্যসাগরের সঙ্গে কৃষ্ণসাগরের সংযোগ স্থাপনকারী দুই তুর্কি প্রণালিতে যুদ্ধজাহাজ চলাচল নিষিদ্ধ করেছে এরদোগান প্রশাসন।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana