বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

কিশোরগঞ্জে এক দিনে বিক্রি হয় সাড়ে ৩কোটি টাকার শুটকি

কিশোরগঞ্জে এক দিনে বিক্রি হয় সাড়ে ৩কোটি টাকার শুটকি

প্রধান বার্তাসম্পাদক:

কিশোরগঞ্জের হাওর, নদ-নদী থেকে সংগৃহীত করা নানা প্রজাতির তাজা মাছের শুঁটকির সমারোহ কিশোরগঞ্জ জেলা শহরের সবচেয়ে বড় বাজারে। প্রতিদিন সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত চলে বেচা কেনা। এখানে বিভিন্ন প্রজাতির শুটকি মাছ পাইকারী বিক্রি করা হয়। প্রাকৃতিকভাবে তৈরি করা হয় বলে এখানকার শুটকি মাছের সুখ্যাতি রয়েছে দেশজুড়ে। এর মধ্যে রয়েছে পুঁটি, চিংড়ি, চান্দা, চাপিলা, টেংরা, মলা-ঢেলা, কাচকিসহ অন্তত ৪০ প্রজাতির শুঁটকি মিলবে এ বাজারে। প্রতিবছর বাজারের ২৫টি আড়তে শীত মৌসুমে ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম হয় এ বাজারে। সপ্তাহে বুধ ও বৃহস্পতিবার দুই দিন হাট বসে এ বাজারে। প্রতি হাটে প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকার উপরে শুটকি বিক্রি হয় বলে জানান এখানকার আড়ৎদাররা। তবে বাজারের প্রধান আকর্ষণ রুপারি পুঁটি মাছের শুঁটকি। হাওরের মিঠাপানির মাছ দিয়েই বানানো হয় এ শুঁটকি। জেলার বাইরে সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, নেত্রকোনা, রামচন্দ্রপুর, দাউদ কান্দি, ফরিদপুর, মোহনগঞ্জ থেকে আসে এ শুঁটকি। আবার ভৈরব, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, গাজীপুরসহ বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা এখান থেকে শুঁটকি কিনে নিয়ে যান।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এখানকার শ্রমিক ও বিক্রেতারা শুটকির বস্তা খুলে ক্রেতাদের দেখাচ্ছে। আবার কেউ বিক্রিত শুটকি বস্তাবন্দি অবস্থায় ভ্যানে ওঠা-নামা করছে। কেউবা শুটকি মাছ (প্যাকেট) করছে। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে যুক্ত রয়েছেন। কোন কোন যায়গায় ছোট বাচ্চাদেরও এ কাজে বড়দের সহায়তা করতে দেখা গেছে।
এ বিষয়ে ক্রেতা প্রদীপ বর্মন জানান, আমি প্রতি হাটে ময়মনসিংহ থেকে এসে এখান থেকে শুটকি কিনে নিয়ে যাই। এখানকার হাওড়েরর শুটকি খুবই সুস্বাদু এবং অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানকার সুযোগ সুবিধাও অনেক বেশি। বরবাজার একজন শুটকি ব্যবসায়ী সেলিমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমরা হাওড় অঞ্চল থেকে শুটকি এনে এখানে বিক্রি করি। এখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা আসে। তাদের সাধ্যমত কিনে নিয়ে যায় এখানকার শুটকি। বাজার আড়ৎদার হুমায়ুন কবির বলেন, হাওরের মিঠাপানি মাছের শুটকি খুবই সুস্বাদু। জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকাররা এখানে শুটকি নিয়ে আসে। ক্রেতা-বিক্রেতার সমাগম অনেক বেশি হয়। বেঁচা-বিক্রিও অনেক ভাল।
বাজার কমিটি সভাপতি মো: আলাউদ্দিন কনক বলেন, প্রতি সপ্তাহে বুধবার ও বৃহস্পতিবার হাট বসে।দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ক্রেতারা এখানে আসেন। তাদের সকল ধরণের সুযোগ-সুবিধা আমরা দিয়ে থাকি এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে হাট পরিচালনা করে থাকি। প্রতি মন শুটকি ১২শ থেকে ১৩শ টাকা বিক্রি হয় এ হাটে। প্রতিমন শুটকি গড়ে ৩০ হাজার টাকা হলে তাতে বিক্রির পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় সাড়ে ৩কোটি টাকারও বেশি।

কিশোরগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা রিপন কুমার পাল জানান, জেলায় এবার ১৫ হাজার মেট্রিক টন শুঁটকি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। তবে সেটা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করছি। জেলার কুলিয়ারচর, তাড়াইল ও মিঠামইন উপজেলায় শুটকি উৎপাদন হয়ে থাকে তবে বেশি উৎপাদন হয় কুলিয়ারচরে। শুটকি উৎপাদনকারীদের উপজেলা পর্যায় আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি এবং স্বাস্থ্য সম্মতভাবে শুটকি উৎপাদন করতে আমরা উৎপাদনকারীদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি। আমাদের এ জেলার শুটকি দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশের বাইরেও রপ্তানি হয়ে থাকে।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana