বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

মুসলিম আইনে তালাক

মুসলিম আইনে তালাক

তালাকের কয়টি নোটিশ পাঠাতে হয়-একটি, দুটি না তিনিটি তা নিয়ে আমাদের সমাজে বেশ ভ্রান্ত ধরণা রয়েছে।। অনেকে বলেন তিন মাসে তিনটি নোটিশ পাঠাতে হয়। প্রকৃতপক্ষে তালাকের একটি নোটিশ একবারই পাঠাতে হয়। আর এ নোটিশ কীভাবে পাঠাবেন, পাঠানোর নিয়মাবলি কী, যথাযথ নিয়ম মেনে না পাঠালে আইনে কী শাস্তির বিধান রয়েছে এসব বিষয়ে আইনি আলোচনা জানুন। যে কোন যুক্তিসংগত কারণে মুসলিম স্বামী বা স্ত্রী একে অন্যকে তালাক প্রদান করতে পারেন। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৭(১) ধারা অনুযায়াী আপনি তালাক দিতে চাইলে তালাকের নোটিশ নিজেই তৈরী করে কিংবা কারও মাধ্যমে তৈরী করিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যাকে তালাক দিচ্ছেন, যদি তিনি ইউনিয়ন পরিষদ এলাকায় বসবাস করেন তাহলে সেই ইউপি চেয়ারম্যানকে এই তালাকের নোটিশ দিতে হবে। আর তিনি যদি পৌরসভা বা সিটি করর্পোশেন এলাকায় বসবাস করেন তাহলে পৌসভা বা সিটি করর্পোরেশনের মেয়রের কাছে লিখিত নোটিশ পাঠাতে হবে। ওই একই নোটিশের একটি কপি যাকে তালাক দিচ্ছেন অর্থাৎ তালাকগ্রহীতাকে পাঠাতে হবে। আর মনে রাখবেন তালাকের নোটিশে দুজন উপযুক্ত সাক্ষীর কলাম রাখবেন এবং তাদের স্বাক্ষর নেবেন। অনেকেই মনে করেন তালাকের নোটিশ কাজির মাধ্যমে না পাঠালে তা কার্যকর হয় না। এ ভুল ধরণা তালাকের নোটিশ স্বামী বা স্ত্রী যিনি তালাক দেবেন তিনি নিজে নিজেই কিংবা কারও মাধ্যমে লিখিত আকারে পাঠিয়ে দিলেই হবে।
১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশে তালাকের নোটিশ পাঠাতে কাজির কাছে যেতে হবে এমন কোন কথা লেখা নেই। এখন জানার দরকার আপনি নোটিশটি কীভাবে চেয়াম্যান মহেদয় ও তালাকগ্রহীতার কাছে পাঠাবেন। আপনি দুটি উপায়ে স্ব-স্ব ব্যক্তির কাছে তালাকের নোটিশ পাঠাতে পারেন। ১. সরাসরি তালাকের নোটিশ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির কাছে পৌঁছে দিয়ে রিসিভ কপিতে স্বাক্ষর করিয়ে নিতে পারেন। ২. সরকারি ডাকযোগে অর্থাৎ পোস্ট অফিসের মাধ্যমে প্রাপ্তিস্বীকারসহ রেজিষ্ট্রি করে চিঠি সংশ্লিস্ট ঠিকানায় পাঠাতে পারেন। এতে সুবিধা বেশি এবং আইনি জটিলতা কম। কারণ সংশ্লিষ্ট ঠিকানার ব্যক্তিদ্বয় চিঠি গ্রহণের পর প্রাপ্তিস্বীকার ডকুমেন্টস আপনার কাছে ফিরে আসে। অনেকে প্রশ্ন করেন তালাকের নোটিশ গ্রহণ না কররে তালাক কার্যকর হবে নি না। আপনি এ নিয়মে তালাকের নোটিশ পাঠালে তালাক গ্রহীতা নোটিশ গ্রহণ না করলে কেন গ্রহণ করেননি তা পোষ্ট অফিসের মন্তব্যসংবলিত নোটিশটি আপনার কাছে সফেরত আসবে। চিঠির খামের ওপর লেখা থাকবে ‘প্রাপক চিঠি গ্রহণ না করায় ফেরত’ অথবা ‘গ্রহণ অস্বীকৃতি’ অথবা ‘খুঁজে পাওয়া গেল না’ ইত্যাদি। যেদিন চিঠিখানা আপনার কাছেফিরে আসবো সেদিন থেকে ৯০ দিন পার হয়ে গেলে তালাক আপনা-আপনিই কার্যকর হয়ে যাবে। অনেকে নোটিশ গ্রহণ না করে মিথ্য বলেন যে তালাকের নোটিশ পাননি। তারা নিছক বোকার মতো কাজ করেন। যে পক্ষ থেকেই তালাকের নোটিশ দেওয়া হোক, সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা মেয়র নোটিশ পাওয়ার ৩০ দিনের মধ্যে উভয় পক্ষের মনোনীত প্রতিনিধি নিয়ে সালিশি পরিষদ গঠনের জন্য প্রতিনিধির নাম চেয়ে উভয়ের কাছে লিখিত চিঠি পাঠন। প্রথম নোটিশে কোনো পক্ষ হাজির না হলে পরবর্তী দুই মাসে আরও দুটি নোটিশ পাঠন। সমঝোতার চেষ্ট সফলও হতে পারে, ব্যর্থও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সালিশি পরিষদের কাজ হলো আপসের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে না সফল তা তাদের রেজিষ্টারে লিপিবদ্ধ করা। এভাবেই আপনা আপনি তালাক হয়ে যায়।
নোটিশ পাঠানো ৯০ দিন পার হওয়ার আগেই যদি আপনাদের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয় তাহলে আপনি একই নিয়ম অনুসরণ করে তালাক প্রত্যাহার করে নিতে পারেন এবং একই স্ত্রীর সঙ্গে হিল্লা বিয়ে বাদেই ঘরসংসার করতে পারেন এতে আইন ও ধর্মের কোথাও বাঁধা নেই। আর যদি ৯০ দিন অতিক্রান্ত এমনকি কয়েক বছর পার হয়ে যাওয়ার পরও আপস হয়ে যায়, তাতেও একই স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঘরসংসারে আইন ও ধর্মের কোথাও বাধা নেই।

শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক
একুশে টাইমস্ বিডিডটকম

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana