শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৭:০১ পূর্বাহ্ন

টিকিট কালোবাজারিতে যাত্রীদের ভোগান্তি

টিকিট কালোবাজারিতে যাত্রীদের ভোগান্তি

একুশে ডেস্ক:

রাজশাহী থেকে এক ডজন আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেন চলে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে। এসব ট্রেনের টিকিট চোখের পলকেই শেষ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। অভিযোগ উঠেছে, রাজশাহী স্টেশন ঘিরে গড়ে ওঠা একাধিক টিকিট কালোবাজারি চক্রের অপতৎপরতায় সাধারণ যাত্রীদের নাগালের বাইরে থাকছে ট্রেনের টিকিট। আর এ চক্রে রাজশাহী রেলস্টেশনের এক বুকিং সহকারীর জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, রাজশাহী স্টেশনে ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি চক্রের পেছনে সহযোগী হিসাবে কাজ করছেন বুকিং সহকারী আব্দুল মমিনসহ কয়েকজন। এ চক্রকে ধরতে সম্প্রতি বিভিন্ন মহল থেকে পশ্চিমাঞ্চল রেল কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়। অবস্থা বেগতিক দেখে সন্দেহভাজন মমিনসহ কয়েকজন বুকিং সহকারী গা-বাঁচাতে ছুটি নিয়েছেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজশাহী রেলস্টেশনের কাউন্টারের দায়িত্বে আছেন ২৬ জন বুকিং সহকারী। এর মধ্যে প্রধান বুকিং সহকারী আব্দুল মমিনসহ পাঁচজন এখন ছুটিতে। মমিন এ স্টেশনে বছরের পর বছর ধরে আছেন। এর আগে ২০১৯ সালে টিকিট কালোবাজারির অভিযোগে তাকে রাজশাহী থেকে সিরাজগঞ্জে বদলি করা হলেও ৬ মাসের ব্যবধানে আবারও ফিরে আসেন তিনি।

ছুটিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত আব্দুল মমিন মূলত ৬ নম্বর কাউন্টারে টিকিট বিক্রি করতেন। মমিন সারা দিন স্টেশনে না এলেও রাত ৮টা থেকে এ কাউন্টারে বসতেন। এ বিষয়ে অভিযুক্ত আব্দুল মমিনের বক্তব্য পেতে তাকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। তার মোবাইলে এসএমএস পাঠিয়েও কোনো উত্তর মেলেনি। ফলে অভিযোগ সম্পর্কে তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, সম্প্রতি দেশে করোনার প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় ধারণক্ষমতার চেয়ে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে ট্রেন চালানোর নির্দেশ দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। টিকিট নিয়ে সংকট বহুদিনের হলেও রেল কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্তের পর তা আরও প্রকট আকার ধারণ করে। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগায় টিকিট কালোবাজারি চক্র।

রাজশাহী স্টেশনে ট্রেনের টিকিট যাত্রার ৫ দিন আগে অনলাইনে ও স্টেশন কাউন্টারে বিক্রি করা হয়। এখন নির্ধারিত মোট আসনের ৫০ শতাংশ অনলাইনে এবং ৫০ শতাংশ কাউন্টারে বিক্রি করা হচ্ছে। সাধারণ যাত্রীদের অভিযোগ, টিকিট বিক্রি শুরুর অল্পসময়ের মধ্যেই তা শেষ হয়ে যায়। বিশেষ করে রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী চারটি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিটের ব্যাপক সংকট দেখা যায়।

অনলাইনে টিকিট নিতে যাত্রীর জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর প্রয়োজন পড়ে। আর কালোবাজারি চক্র নানাভাবে অন্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইন থেকে টিকিট নামিয়ে নিচ্ছে। এসব টিকিটই কালোবাজারে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। আর ট্রেনে টিকিট যাচাইয়ের ব্যবস্থা থাকলেও জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর যাচাইয়ের ব্যবস্থা না থাকায় সেই সুযোগকে কাজে লাগাচ্ছে এ চক্রটি।

রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন টিকিট কালোবাজারিতে জড়িত কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, টিকিট কালোবাজারিদের সঙ্গে রাজশাহী নগরীর কয়েকটি কম্পিউটারের দোকান, বিমানের টিকিট বিক্রির দোকানসহ শিরোইল, মঠপুকুর, শিরোইল কলোনি ও দড়িখরবোনা এলাকার একদল যুবক জড়িত। তারা অন্যের জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংগ্রহ করে অনলাইনে টিকিট সংগ্রহের পাশাপাশি রাজশাহী স্টেশনের প্রধান বুকিং সহকারীসহ আরও কয়েকজনের সহযোগিতায় দিব্যি চাহিদামতো টিকিট পেয়ে যাচ্ছেন। সেসব টিকিট তারা চড়া দামে বিক্রি করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana