বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৪:৩৫ অপরাহ্ন
একাত্তর সাল। মুক্তিযুদ্ধকালে রণাঙ্গণে আমাদের একটি প্রিয় গান ছিল-‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি’। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের বিজয় এসেছিল। সেদিন ফুল ফুটেছিল, বিজয়ের আনন্দে ভরে উঠেছিল বাংলার আকাশ, বাতাস। দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীকে সশস্ত্র সংগ্রামে পরাজিত করে সেদিন পূর্ণ মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল স্বাধীন রাস্ট্র বাংলাদেশ। দেশবাসী তাদের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্নগুলো বাস্তবায়তি হবে বলে আশায় উদ্বেলিত হয়েছিল। স্বজন হারানোর ব্যথায় কাতর হওয়া সত্ত্বেও দেশের সমগ্র জনগণ সেদিন হয়ে উঠেছিল বিজয়-আনন্দে আত্মহারা।
আজকাল মানুষের মাঝে সবচেয়ে ঘনঘন উচ্চরিত শব্দগুলো হলো দ্রব্যমূল্যেও পাগলা ঘোড়া, ছাঁটাই, বেকরত্ব, ক্যাসিনো বাণিজ্য, হেলমেট বাহিনী, পেট্রোল বোমা, বার্ন ইউনিট, ককটেল, নাশকতা ইত্যাদি এবং সে সঙ্গে ক্রসফায়ার, এনকাউন্টার, হুকুমের আসামি, গণগ্রেপ্তার, গ্রেপ্তার-বাণিজ্য ইত্যাদি। এগুলোই এখন জনজীবনের নিত্যসহচর হয়ে উঠেছে। এক গভীর ও সর্বব্যাপী সংকটজাল আমাদের দেশকে আজ আচ্ছন্ন করে রেখেছে। আজ যখন স্বাধীনতার পঞ্চাশবছর পূর্তি উপলক্ষে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোটি কোটি টাকা ব্যায় হয়-আতশবাজি ফোটানো হয়, প্রদীপ শিখা জ¦ালানো হয়। তখন অন্যদিকে তাকিয়ে দেখি রেলস্টেশনের কিংবা বাসস্ট্যানের প্লাটফর্মে কিংবা রাস্তার ফুটপাতে ছেঁড়া কাঁথা মুড়িয়ে থাকা অনাহারে-অর্ধাহারে থাকা পিতা-মাতাতুল্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। আবার কারো কারো খাবার টেবিলে রুটি মাংসের পাহাড়- তারা অভিজাত এলাকায় তথাকথিত এলিট শ্রেণী। আর তাদের বাড়ীতে ফুট ফরমায়েস থাকে যাদের স্কুলে যাওয়ার বয়স সেই কিশোর-কিশোরীরা। দু’মুঠো ভাতের জন্য সাহেব-মেমসাহেবদের লাথি খায়, ঘাড় ধাক্কা খায়।
একাত্তরের মুক্তি শুধুই আমাদেরকে রাজনৈতিক মুক্তি দিয়েছে-কিন্তু অর্থনৈতিক মুক্তি দিতে পারেনি। কারণ স্বাধীনতারপর ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রযন্ত্রের চাবিকাঠি চলে গিয়েছে কতিপয় বুর্জোরা পূজিপতিদের হাতে। তাই আবারো একাত্তরের মতো একটি সশস্ত্র বিপ্লব দরকার, এই বিপ্লব হবে অর্থনৈতিক বিপ্লব। এই বিপ্লব শ্রেণীহীন-বর্নহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার বিপ্লব।
শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক
একুশে টাইমস্ বিডিডটকম