শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:২৩ পূর্বাহ্ন
আমি যখন সুনির্মল শৈশব জীবন কাটিয়ে কৈশোরে পদার্পন করিলাম। তখন আমার ভদ্র-নিরীহ অভিভাবকগণ, আমাকে বলল তুমি কখনোও মিছিলে যাবে না, কখনোও অস্ত্র হাতে নেবে না। কোন দিনই দেশাত্ববোধক-জাগরনী গান গাইবে না। ততদিনে পাখির পাখার মতো আমার পালক গজিয়েছে। আমি একাদশ বিজ্ঞান শ্রেণির প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমার শিরা-উপশিরায় প্রবাহমান টগবগে তরুণ প্রতিবাদী রক্ত আমাকে পীড়া দিতে লাগলো, প্রতিবাদ করার জন্য, মিছিলে যাওয়ার জন্য। আমি ঝংকারের সুর শুনে সতীর্থদের সাথে মিছিলে গেলাম, শ্লোগান দিলাম ‘পদ্মা, মেঘনা-যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা’ কিংবা ‘মুজিব হত্যার পরিণাম বাংলা হবে ভিয়েতনাম’ প্রভৃতি। কে আমাকে আটকায় ? শুধু তাই নয়, আমি কিছু দেশাত্মবোধক জাগরণী গানের উপর নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পেলাম। ভাঙ্গা গলায় বেসুরা সুরে সমেবেত সকলের সাথে গাইতে লাগলাম.. ‘কফি হাউজের সেই আড্ডাটা… কোথায় হারিয়ে গেল সোনালী বিকেল গুলো সেই…।’ মনোমুগ্ধ হয়ে সুর তুলতে চাইতাম ‘মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি-একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি…।’ অভিভাবক শ্রেণীয় বিজ্ঞ মহোদয় ও মহোদয়াগন আরও বলেছিল- কখনও প্রতিবাদ করিবে না, সমাজকে মানিয়ে নিবে। জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে চাইলে, তোষামোদি শিখ।
তৃতীয় ধাপেও আমি ব্যর্থ। বিবেকের দংশনে দংশিত হয়ে আমি সেইসব বিবেক বর্জিত আদর্শহীন সমাজপতিদের চোঁখে ভাল থাকতে পারলাম না। তাই আজ আমি দংশিত বিবেক নিয়ে অজানা গন্তব্যে উদ্দ্যেশ্যহীনভাবে নিরুদ্দেশ হতে চাই। হয়তোবা এ গানই আমার জীবনের শেষ গান। এতেও দু:খ নেই। তবে প্রস্থান বা মৃত্যুটা যেন মাথা উঁচু করে হয়। এটাই আমার গর্ব ও সুখ হয়ে থাকবে-সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায়।
[ প্রবন্ধটি রূপক অর্থে লেখা। কোন ঘটনা বা বিষয়কে অনুকরণ করে নয়]
শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক
একুশে টাইমস্ বিডিডটকম