বৃহস্পতিবার, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন

কাশ্মীরের সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রী ফের গৃহবন্দী!

কাশ্মীরের সাবেক তিন মুখ্যমন্ত্রী ফের গৃহবন্দী!

একুশে ডেস্ক:
খ্রিস্টীয় নববর্ষের প্রথম দিন গৃহবন্দী করা হলো ভারত নিয়ন্ত্রিত জম্মু-কাশ্মীরের তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে। তাদের বাড়ির সামনে পুলিশের ভারী ট্রাক রেখে দেওয়া হয়েছে। প্রধান ফটকে লাগানো হয়েছে শিকল!
সাবেক মুখ্যমন্ত্রীদের কেন গৃহবন্দী করা হয়েছে, এর কোনো ব্যাখ্যা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়নি।
বিধানসভা আসন পুনর্বিন্যাসের প্রতিবাদে নেতারা যাতে শান্তিপূর্ণ ধরনায় বসতে না পারেন, সে জন্যই এ ব্যবস্থা। প্রশাসনের এই ব্যবস্থাকে ‘জুলুম’ আখ্যা দিয়ে এর  বিরুদ্ধে সরব হয়েছে উপত্যকার সব রাজনৈতিক দল। অবশ্য ভারতের শাসক দল বিজেপি নিরব।
সংবাদমাধ্যমগুলো বলছে, শনিবার শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করেছিল পাঁচদলীয় জোট গুপকর অ্যালায়েন্স। সাবেক মুখ্যমন্ত্রী ফারুক আবদুল্লাহ জোটের এই কর্মসূচির কথা জানিয়ে বলেছিলেন, শান্তিপূর্ণভাবে তারা ‘ডিলিমিটেশন কমিশন’–এর প্রস্তাবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাবেন। রাজ্য দ্বিখণ্ডিত হওয়ার পর এই কমিশন জম্মু ও কাশ্মীরের বিধানসভার সীমানা পুনর্গঠনের কাজে হাত দেয়। গত ডিসেম্বর মাসে কমিশন সুপারিশ করে, নতুন এই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের বিধানসভার মোট আসন বাড়িয়ে করা হবে ৯০। এর মধ্যে জম্মু অঞ্চলে বাড়বে ৬টি আসন। ৩৭ থেকে বেড়ে এই অঞ্চলের মোট আসন হবে ৪৩।
কাশ্মীর অঞ্চলে একটি আসন বেড়ে হবে ৪৭। এই প্রস্তাব কার্যকর হলে জম্মু ও কাশ্মীরের মধ্যে আসনসংখ্যার ব্যবধান ৯ থেকে কমে ৪-এ দাঁড়াবে। উপত্যকার রাজনীতিকদের অভিযোগ, সরকার গঠনে হিন্দুপ্রধান জম্মুকে সুবিধা পাইয়ে দিতে বিজেপি এই ব্যবস্থায় এগোচ্ছে।
উপত্যকার সব রাজনৈতিক দল এই আসন বিন্যাসের প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। কমিশনের প্রস্তাবও প্রত্যাখ্যান করেছে। শনিবার ওই প্রস্তাবের বিরোধিতার জন্য শান্তিপূর্ণ ধরনার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। তা বানচাল করতেই তিন সাবেক মুখ্যমন্ত্রীকে গৃহবন্দী করা হয়।
শনিবার সকালেই গৃহবন্দিত্ব নিয়ে টুইট করেন ওমর আবদুল্লাহ। তিনি লেখেন, ‘নতুন বছর শুরু হলেও কিছু কিছু জিনিস বদলায় না। জম্মু-কাশ্মীরে বেআইনিভাবে মানুষজনকে গৃহবন্দী করে রাখছে। সাধারণ স্বাভাবিক গণতান্ত্রিক আন্দোলনকেও প্রশাসন ভয় পাচ্ছে। আমাদের বাড়ির ফটকের সামনে পুলিশ তাদের ট্রাক দাঁড় করিয়ে রেখেছে, যাতে জোটের নেতারা শান্তিপূর্ণ ধরনায় বসতে না পারেন।’ ওমর টুইটের সঙ্গে ট্রাকের ছবিও জুড়ে দিয়েছেন। সেই সঙ্গে দেন আরও একটি ছবি, যাতে দেখা যাচ্ছে তাঁর বাবার বাসভবনসংলগ্ন এক ফটকে চেইন লাগানো রয়েছে। ওমর আবদুল্লাহ টুইটে লিখেছেন, ‘তবু দেশের নেতারা গলা উঁচিয়ে বিশ্বকে শোনান যে ভারত বৃহত্তম গণতন্ত্র! বিস্ময়!’
সাবেক মুখ্যমন্ত্রী পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতিও টুইট করেছেন। তিনি লেখেন,‘সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল ও রাজ্য দ্বিখণ্ডিকরণের ঢাক অহরহ পিটিয়ে চলেছে। অথচ এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতার প্রশ্নে অসহিষ্ণু। অসংখ্যবার আমাদের গৃহবন্দী করা হচ্ছে। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ দেখাতে দিচ্ছে না।’
জোটত্যাগী দল পিপলস কনফারেন্স নেতা সাজ্জাদ লোন টুইট করে বলেছেন, ‘নেতাদের বন্দী রাখার কোনো যুক্তিগ্রাহ্য কারণই আমি দেখতে পাচ্ছি না। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক বিক্ষোভকে এভাবে দমানো হলে সহিংস বিক্ষোভকেই উৎসাহিত করা হবে।’
জম্মু-কাশ্মীর প্রদেশের কংগ্রেস সভাপতি গুলাম আহমেদ মির গৃহবন্দী রাখার বিষয়কে ‘অগণতান্ত্রিক ও অনৈতিক’ জানিয়ে বলেছেন, এই সিদ্ধান্ত দেশের গণতান্ত্রিক রীতিনীতির পরিপন্থী।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana