সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৮:৩০ অপরাহ্ন

এবার বলিউড অভিনেত্রী পারভিন ববির মর্মান্তিক মৃত্যুর রহস্যের সন্ধানে-

এবার বলিউড অভিনেত্রী পারভিন ববির মর্মান্তিক মৃত্যুর রহস্যের সন্ধানে-

পারভিন ববি

বিষয়টি শুধুই স্মৃতিচারন; আর আপেক্ষ করা ছাড়া আর কিছুই নয়। সত্তর ও আশির দশকে বলিউডের রূপালি পর্দায় আধুনিকতার ছোঁয়া আর ওয়েস্টার্ন স্টাইল আনয়নকারী এক প্রতিভাবান অভিনেত্রী ও মডেলের নাম পারভিন ববি। তার নি:সঙ্গ জীবন ও মর্মান্তিক মুত্যুর মধ্য দিয়েও পারভিন ববি তার প্রতিভাগুনে আজও দর্শক হৃদয় ও চলচ্চিত্রে শিল্পে কিংবদন্তী হয়ে রয়েছেন। তার বর্ণাট্য অভিনয় জীবনে উপহার দিয়েছেন ব্যবসা সফল দিওয়ার, ওমর আকবর এন্টনি, নমক হালাল, শানের মত ব্যবসা সফল রোমান্টিক ছবি। ইংরেজী সাহিত্যে গ্রাজুয়েশন করা এ অভিনয় শিল্পী টিভি সিরিয়াল ও মডেলিংয়েও জনপ্রিয় ছিলেন। সেই সময়ে- বিশ্বখ্যাত টাইম ম্যাগাজিনে প্রচ্ছদ পৃষ্ঠায় থাকত পারভিন ববির জামকালো ছবি কিন্তু আজীবন অবিবাহিত এই নায়িকার ক্ষনস্থায়ী জীবন রহস্যে ঘেরা।
উল্লেখ্য যে, পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি লম্বা এ অভিনেত্রী ভারতের জুনাগড়ে ১৯৫৪ সালে এক পাঠান মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা ওয়ালি মোহাম্মদ খান বাকি ছিলেন জুনগড় নবাবের একজন দেওয়ান। পারভিন শিক্ষা জীবন সম্পন্ন করেন আহমেদাবাদের সেন্টজেভিআরর্টস কলেজে থেকে এবং সত্তর সালে মডেলিং ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে অভিনয় জগতের তার হাতেখড়ি। অত:পর ১৯৭৩ সালে ব্যবসা সফল ‘দিওয়ার’ ছবি তাকে খ্যাতির শীর্ষে পৌঁছে দেয়। ৭২ থেকে ৮০ সাল পর্যন্ত অমিতাব বচ্চন, কবির বেদী, শশীর কাপুর প্রমুুখ অভিনেতার বিপরীতে অভিনয় করে বলিউডে একটি মজবুত ফ্লাটফর্ম তৈরী করে নিয়েছিল কিন্তু ঝড় তখনই উঠল। যখন বিখ্যাত পরিচালক মহেশ ভাটের সাথে গভীর প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এছাড়াও অভিনেতা কবির বেদী ও
ডেনীর সঙ্গেও তার হৃদয়ঘটিত ঘনিষ্ঠতা ছিল বলে গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু মহেশ ভাটের বিষয়টি ছিল একেবারে আলাদা ও স্বতন্ত্র।

পরিচালক মহেশ ভাটের সাথে তার প্রনয়ঘটিত ঘনিষ্ঠতা বৃৃদ্ধি পেলেও বিবাহিত মহেশ ভাট তার সন্তান আলিয়া ভাটের (বর্তমানে নায়িকা) দিকে চেয়ে পারভিন কে স্ত্রী হিসাবে স্বীকৃতি দিতে পারিনি। বরঞ্চ লিভ-টুগেদারের মতো প্রাশ্চাত্য ধারায় জীবকে ভোগ করেছেন কিছুকাল। এখান থেকে পারভিন ববির মানসিক ভারসাম্যহীনতা শুরু হয়। বাধ্য হয়ে মহেশ ভাট তাকে মনোবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যায় এবং তখন চিকিৎসক তাকে সিজোফ্রেনিয়া রোগী বলে চিহ্নিত করে। প্রায়ই তিনি অহেতুক পাগলের মতো ভয় পেতেন এবং কখনো বলতেন চিত্রনায়ক অমিতাবচ্চন তাকে হত্যা করাতে চায়। আবার কখনো তাকে বলতে শোনা যায়, উগ্রপন্থী মুসলিম গ্রুপগুলো তাকে হত্যা করতে চায়। এমতাবস্থায় উচ্চ চিকিৎসার জন্য ববিকে পাঠানো হল আমেরিকান নিউইয়র্কে। কিন্তু ছয় বৎসর পরে আবার যখন ববি বলিউডে ফিরে এলেন তখনো অনেকটা অস্বাভাবিক ছিলেন। ২০০১ সালের পর তাকে আর রূপালী পর্দায় দেখা যায় না। নি:সঙ্গ পারভিন ববি আরো বেশী মদ্যপায়ী হয়ে উঠলেন। তখন তিনি ডায়াবেটিকস ও পায়ের গ্যাংরিনে ভুগছিলেন। ২০০৫ সালে ৪ এপ্রিল একদিন ফ্লাটের প্রতিবেশীরা দেখলেন দৈনিক পত্রিকা ও দুধের প্যাকেট দরজার বাহিরে স্তুপ আকারে জমা হয়ে রয়েছে। ভেতরে কোন সারা শব্দ নেই। বাধ্য হয়ে পুলিশ ডাকলেন; পুলিশ এসে ববির লাশ উদ্ধার করলেন। পরবর্তীতে ময়না তদন্ত রিপোর্টে জানাযায়, শারিরীক অসুস্থ্যতায় তিন দিন পূর্বেই তার মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু কারো মতে এটা পরিকল্পিত হত্যা, আবার কেউবা বলেন আত্মহত্যা। তবে নির্মম সত্য হল- অকালে ঝরে গেল এক প্রতিভাবান শিল্পীর জীবন। আর তার মৃতদেহ সৎকার করতে অশ্রুসিক্ত নয়নে এগিয়ে এসেছিলেন মহেশ ভাট, রবি বেদী ও ডেনিসহ তিন সাবেক প্রেমিক। পারভিন ববি তার জীবনদ্দশাতেই সকল সহায় সম্পত্তি চ্যারিটির নামে দান করে দিয়েছিলেন।

শাফায়েত জামিল রাজীব
প্রধান সম্পাদক
একুশে টাইমস্ বিডিডটকম

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana