একুশে ডেস্ক:
থার্টিফার্স্ট নাইটের আতশবাজি মানুষ ও প্রকৃতির জন্য ভয়াবহরকম বিপজ্জনক বলে একটি বিশ্লেষণে বলা হয়েছে। কারণ আতশবাজির শব্দ স্বাভাবিক শব্দের চেয়ে দ্বিগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। অন্যদিকে বায়ুতে ধুলাবালির পরিমাণ ৩০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ে। এতে ঝুঁকির মধ্যে পড়ে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বৃদ্ধরা। এমনকি গর্ভের শিশুদের শ্রবণশক্তি নষ্ট ও বিকলাঙ্গ হওয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়।
স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস) রাজধানীর বেইলি রোড, ধানমন্ডি-৩২, শাহবাগ, তেজগাঁও, গুলশান, আবদুল্লাহপুর ও আহছান মঞ্জিলসহ মোট ১১টি স্থানের শব্দমাত্রা বিশ্লেষণ করেছে। এতে ২০১৭ থেকে ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১২টা ও ১২টা থেকে ১টার শব্দের মাত্রার তথ্য সংগ্রহ করা হয়। একই সঙ্গে এই সময়ের বায়ুদূষণের পরিমাণটাও সংগ্রহ করা হয়।
বিশ্লেষণে দেখা যায়, স্বাভাবিক সময়ে যে শব্দ থাকে যা আতশবাজির জন্য তার চেয়ে থার্টিফার্স্ট বা ৩১ তারিখ রাতে ৪০ শতাংশ বেশি শব্দ উৎপন্ন হয়েছে। অন্যদিকে ৩০ শতাংশ বেশি বায়ুদূষণ হয়। তথ্যানুযায়ী, স্বাভাবিক সময়ে শব্দের মাত্রা ৫৫ থেকে ৭০ ডেসিবলের মধ্যে। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাত ১১টা থেকে ১২টা ও ১২টা থেকে ১টা এই দুই ঘণ্টা গড়ে ৯০ থেকে ১১০ ডেসিবল পর্যন্ত শব্দের মাত্রা চলে যায়। কিন্তু স্বাভাবিক রাতের ওই সময়ে স্বাস্থ্যসম্মত শব্দের মাত্রা হওয়ার কথা ছিল ৫০ ডেসিবল। অন্যদিকে বায়ুদূষণের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ে প্রতি ঘনমিটারে ১৫০ থেকে ১৬০ মাইক্রোগ্রাম ধুলাবালি থাকে। কিন্তু ৩১ ডিসেম্বর রাতে ৩০ ভাগ বেড়ে প্রতি ঘনমিটারে ২২০ থেকে ২২৫ মাইক্রোগ্রাম হয়ে যায়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ এই আতশবাজির ওপর কড়া নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এর কোনো বৈধতা নেই। তারপরও এই উৎসব নগরবাসী করে থাকেন। কিন্তু ক্ষতির বিষয় নিয়ে কারও তেমন সতর্কতা অবলম্বন করতে দেখা যায় না। প্রকাশ্যে আতশবাজি নিষেধ করা হলেও শহরের বিভিন্ন বাসার ছাদে পটকা ফোটানো হয়। একই সঙ্গে আগুন লাগার ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় না নিয়েই ফানুস ওড়ানো হয়।
এ বিষয়ে স্টামফোর্ড বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) প্রতিষ্ঠাতা ও পরিচালক অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার সময়ের আলোকে বলেন, ‘আপনি দেখুন ৩১ ডিসেম্বরের আগের তিন দিনের ইনহেলার ব্যবহার ও পরের দিনের ব্যবহার। দেখবেন অন্তত ৫০ ভাগ বেশি বিক্রি হচ্ছে। কারণ ঢাকায় যারা শ্বাসকষ্টের রোগী আছেন তারা এই ধুলাবালি নিশ্বাসের সঙ্গে নেবেন। ফলে তাদের শ্বাসকষ্ট বাড়বে। সবাই তারা দৌড়াবেন ইনহেলার কিনতে। কারণ আতশবাজির ধোঁয়ায় ব্ল্যাক কার্বন, কার্বন মনো-অক্সাইড থাকে ও ধুলাবালি থাকে। এগুলো যখন ফুসফুসে যাবে তখন এক ধরনের প্রদাহের সৃষ্টি করে। ফলে শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। বিশেষ করে শিশু, অন্তঃসত্ত্বা নারী ও বৃদ্ধ যারা থাকবে তাদের এই সমস্যা হবে। এটা বায়ুদূষণের কারণে।
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের এই বিভাগীয় প্রধান বলেন, ‘আরেকটা দিক হলো আতশবাজি ফোটানোর সঙ্গে সঙ্গে যে শব্দ হবে তার কারণে যারা হার্টের রোগী, অসুস্থ ও অন্তঃসত্ত্বা নারী তাদের সমস্যা হতে পারে। কারণ এই আতশবাজি যদি ১১০ ডেসিবল শব্দের বেশি হয় এবং কোনো অন্তঃসত্ত্বা মহিলার আশপাশে ফোটানো হয়, তাহলে গর্ভের শিশুর শ্রবণ ক্রিয়া নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ওই মা তো ক্ষতিগ্রস্ত হবেই, পাশাপাশি গর্ভের যে শিশু আসবে তারও ক্ষতি হবে। ওই শিশুর ব্রেইন ড্যামেজ হয়ে যেতে পারে। বাচ্চা মিস ক্যারেজ ও বিকলাঙ্গ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। এটা মানুষের ক্ষেত্রে।
অন্যদিকে আতশবাজির আলো ও শব্দের কারণে, টানা এক ঘণ্টা যখন ফোটাতে থাকবেন তখন যেটা হবে, পাখিরা ভয় পেয়ে যাবে। অনেক পাখি দূরে চলে যাবে। অনেক পাখি বাচ্চাকে ওই সময় খাওয়াচ্ছিল তখন তারা পালিয়ে যাবে বা পারবে না। বাচ্চা মারা যাবে। ফলে আমাদের জীববৈচিত্র্যের ওপরও একটা খারাপ প্রভাব আসবে। ছোট ছোট মৌমাছি যারা ফুলের পরাগায়নের জন্য কাজ করে, হঠাৎ এত ধোঁয়া ও শব্দের কারণে কেউ কেউ মারা যাবে, কেউ পালিয়ে যাবে। ফলে শহরে ফুলের পরাগায়ন কম হলে সারা বছর এর প্রভাব আমরা দেখতে পাব। এটা আসলে জটিল ও ত্রিমুখী সমস্যা সৃষ্টি করে। আর ফানুস ওড়ানোর ক্ষেত্রে যেকোনো সময় যেকোনো স্থাপনার ওপর পড়ে আগুন লাগার ঝুঁকি থাকে। অনেক সিএনজি পাম্প ও অনেক সেনসিটিভ জায়গা রয়েছে। যেখানে আগুন লাগতে পারে। নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে।