শনিবার, ২৭ Jul ২০২৪, ০৬:৫৮ পূর্বাহ্ন

যৌবনের ইবাদতে যে পুরস্কার

যৌবনের ইবাদতে যে পুরস্কার

আল্লাহর বিশেষ এক নেয়ামত হলো যৌবনকাল। এটা মানুষের জীবনের বসন্তকাল। একালেই মানুষ জীবনের প্রকৃত সার্থকতা উপলব্ধি করে। নিজের শক্তি-সামর্থ্যে ভর করে সামনে এগিয়ে যায়। জীবনের স্বপ্নগুলোর বাস্তবায়নে অবিশ্রান্ত ছুটে চলতে পারে। অসাধ্যকে সাধ্যে রূপান্তরিত করতে পারে। যৌবনের আগে বা পরে তা প্রায়ই অসম্ভব। কারণ যৌবনের পূর্বাপরে থাকে পরনির্ভরশীলতা- শৈশব, কৈশোর ও বার্ধক্য। অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে জীবনযাপনের কাল।
কোরআনেও আল্লাহ তায়ালা শৈশব, কৈশোর ও বার্ধক্যকে অক্ষমতা আর যৌবনকে শক্তি-সামর্থ্যরে কাল বলে আখ্যায়িত করেছেন। বর্ণিত হয়েছে, ‘আল্লাহ সেই সত্তা, যিনি তোমাদের সৃষ্টি শুরু করেছেন দুর্বল অবস্থা থেকে, দুর্বলতার পর তিনি দান করেন শক্তি, ফের শক্তির পর দেন দুর্বলতা ও বার্ধক্য।’ (সুরা রূম : ৫৪)।
যৌবনকালের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে রাসুল (সা.) বলেন, ‘তোমাদের জীবনে পাঁচটি অবস্থা আসার আগে পাঁচটি অবস্থার মূল্যায়ন করো- এক. বার্ধক্যে উপনীত হওয়ার আগে যৌবনকে। দুই. অসুস্থ হওয়ার আগে সুস্থতাকে। তিন. দারিদ্র্য আসার আগে সচ্ছলতাকে। চার. কর্মব্যস্ততার আগে অবসরকে। পাঁচ. মৃত্যুর আগে জীবনকে।’ (শুআবুল ঈমান : ১০২৪৮)। তাই জীবনের গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ের হক যথাযথ আদায় করা জরুরি। প্রতিটি যুবকের জন্য আবশ্যক যৌবনের পরম মুহূর্তগুলো পরিপূর্ণ কাজে লাগানো। রবের দেওয়া নেয়ামত যৌবনের শক্তি-সামর্থ্য আল্লাহর ইবাদত ও আনুগত্যে ব্যয় করা। আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের হক আদায় করা। উম্মাহর জন্য নিজেকে উৎসর্গ করা। জ্ঞানের পথে নিজের শক্তি ও মেধাকে ব্যয় করা।
সাধারণত যৌবনের উত্তাল সময়ে গুনাহে জড়ানোর সম্ভাবনা থাকে সবচেয়ে বেশি। তাই যুবকদের প্রয়োজন আত্মাকে পরিচর্যা ও পরিশুদ্ধ করা। চিন্তাচেতনা ও আদর্শকে সুদৃঢ় রাখা। কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘সে-ই সফলকাম হবে, যে নিজ আত্মাকে পরিশুদ্ধ করবে আর ব্যর্থ হবে সেই, যে নিজেকে গুনাহের মধ্যে ধ্বংস করবে।’ (সুরা শামস : ৮-৯)। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরো আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীরই ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন নষ্ট হয়ে যায়, গোটা শরীরই নষ্ট হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরোটি হলো হৃদয়।’ (বুখারি : ৫২)। তাই যৌবনের শক্তি ও সামর্থ্যরে দিনগুলোয় যুবকরা আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে নিজেকে সফেদ ও সুন্দর রাখবে। অপরাধের স্রোতে নিজেকে না ভাসিয়ে যথাসাধ্য নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করবে। এমনকি অনর্থক কাজেও সময় ব্যয় করবে না। অর্থাৎ যে কাজের মাধ্যমে আখেরাতে কল্যাণ রয়েছে বা দুনিয়ার কোনো বৈধ ফায়দা রয়েছে তা করবে। কিন্তু যে কথা-কাজে দুনিয়া-আখেরাতের কোনো ফায়দা নেই তা করবে না। রাসুল (সা.) বর্ণনা করেন, ‘ইসলামের একটি সৌন্দর্য হলো, যে কাজে দ্বীন বা দুনিয়ার কোনো ফায়দা নেই তা ছেড়ে দেওয়া। (তিরমিজি : ২৩১৮)
জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে এই জীবন-যৌবন আল্লাহ প্রদত্ত আমানত। এর পূর্ণ হিসাব আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রদান করতে হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কেয়ামত দিবসে পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদ হওয়ার আগ পর্যন্ত আদমসন্তানের পদদ্বয় আল্লাহ তায়ালার কাছ থেকে সরতে পারবে না। তার জীবনকাল সম্পর্কে, কীভাবে অতিবাহিত করেছে; তার যৌবনকাল সম্পর্কে, কী কাজে তা বিনাশ করেছে; তার ধন-সম্পদ সম্পর্কে, কোথা থেকে তা উপার্জন করেছে এবং তা কী কী খাতে খরচ করেছে এবং সে যতটুকু জ্ঞান অর্জন করেছিল সে মোতাবেক কী কী আমল করেছে।’ (তিরমিজি : ২৪১৬)। তাই যুবকদের কর্তব্য হচ্ছে- মাদকাসক্তি, খুন-গুম, চুরি-ডাকাতি, ব্যভিচার, সুদ-ঘুষের কারবারসহ আরও যত অপরাধমূলক কাজ আছে সব পরিহার করে সত্য ও সততার পথে চলা।
ঈমানে-আমলে যৌবনের সময়গুলো ফুলেল করে তোলা। সর্বোপরি রবের আরশের ছায়ায় স্থান লাভকারী সাত শ্রেণির একজন হওয়ার চেষ্টা করা। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর রহমতের ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাঁর আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। এক. ন্যায়পরায়ণ শাসক। দুই. সে যুবক যার জীবন গড়ে উঠেছে রবের ইবাদতের মধ্যে। তিন. সে ব্যক্তি যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকে। চার. সে দুই ব্যক্তি যারা পরস্পরকে ভালোবাসে আল্লাহর ওয়াস্তে; একত্র হয় আল্লাহর জন্য এবং পৃথকও হয় আল্লাহর জন্য। পাঁচ. সে ব্যক্তি যাকে কোনো উচ্চবংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে, ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। ছয়. সে ব্যক্তি যে এমন গোপনে দান করে যে, তার ডান হাত যা খরচ করে বাম হাত তা জানে না। সাত. সে ব্যক্তি যে নির্জনে আল্লাহর জিকির করে, ফলে তার দুই চোখ দিয়ে অশ্রুধারা বইতে থাকে।’ (বুখারি : ৬৬০)
আল্লাহ তায়ালা এবং বান্দার মধ্যকার সম্পর্কে অন্তরায় হলো গুনাহ। তাই আল্লাহ তায়ালা কোরআনে নানা গুনাহের বিবরণ তুলে ধরেন। যেমনÑ শিরক করা, জিনা, ব্যভিচার বা পরকীয়া করা, দ্বীনের আবশ্যকীয় সুস্পষ্ট বিষয়াবলির কোনো একটি অস্বীকার করা, আত্মহত্যা করা, মা-বাবার অবাধ্য হওয়া, কারও ওপর জুলুম বা অত্যাচার-অবিচার করা, কাউকে ধোঁকা দেওয়া, কোনো সতী-সাধ্বী নারীর ওপর মিথ্যা অপবাদ আরোপ করাসহ অগণিত গুনাহ।
রাসুল (সা.) নিজেও নানাভাবে উম্মতকে গুনাহের ব্যাপারে সতর্ক করেছেন। কারণ গুনাহ মানুষের ব্যক্তিজীবন, পারিবারিক জীবন, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে খারাপ প্রভাব বিস্তার করে। কখনও কখনও ব্যক্তির গুনাহের প্রভাব ব্যক্তিকে ছাড়িয়ে পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রে এমনকি সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়ে। তাই যুবকদের জন্য কর্তব্য ছোট-বড় সব ধরনের গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা। এমনকি যেসব কাজ ব্যক্তিকে গুনাহের দিকে ধাবিত করে তা থেকে যথাসাধ্য বিরত থাকা। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীলতা ও বিপথগামিতা।’ (সুরা বনি ইসরাঈল : ৩২)। অন্য আয়াতে বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য হোক বা গোপনে কোনো রকম অশ্লীল কাজের কাছেও যেও না।’ (সুরা আনয়াম : ১৫১)। আল্লাহ যৌবনের সময়গুলোকে কাজে লাগিয়ে পরকালের জীবনকে সুন্দর করার তাওফিক দিন। আমিন।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana