বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৫৬ পূর্বাহ্ন

বিবাহিতদের ঢাবির হলে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে

বিবাহিতদের ঢাবির হলে থাকার বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রীদের আবাসিক হলে থাকার ক্ষেত্রে বিবাহ ও মাতৃত্ব একটি প্রতিবন্ধকতা। কোনো ছাত্রী বিবাহিত হলে তাকে বিশেষ ক্ষেত্রে হলে থাকতে দেওয়া এবং অন্তঃসত্ত্বা হলে তিনি আর আবাসিক হলে থাকতে পারবেন না; এমনটিই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধান। সম্প্রতি বিয়ে হওয়ায় শামসুন নাহার হল ও বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হলের দুই শিক্ষার্থীর আসন নিয়ে জটিলতা তৈরি হয়েছে। এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে পাঁচ ছাত্রী হলের আবাসিক শিক্ষার্থীসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। নিয়মটি বাতিলের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বরাবর
আবেদন করেছে মেয়েদের পাঁচ হলের আবাসিক ছাত্রীরা।
এ নিয়মটি পরিবর্তন, বাতিল, পরিমার্জন করা হবে কি না তা নিয়ে আজ প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে সময়ের আলোকে নিশ্চিত করেছেন কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. আবদুল বাছির এবং কমিটির সদস্য ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী। আজ সন্ধ্যা ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি আবদুল বাছির বলেন, আজ সন্ধ্যা ৬টায় সব হলের প্রভোস্টদের নিয়ে কমিটির বৈঠক আছে। বৈঠকের কিছু এজেন্ডার মধ্যে বিবাহিত ও অন্তঃসত্ত্বা ছাত্রীদের হলে থাকার বিষয়ের এজেন্ডাটিও রয়েছে। আমরা সবাই মিলে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
অধ্যাপক ড. একেএম গোলাম রব্বানী বলেন, শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে একটি আবেদন এসেছে নিয়ম পরিবর্তনের জন্য। সেটি নিয়ে পর্যালোচনা করা হবে। সব হল প্রভোস্টরা থাকবেন, উপাচার্য থাকবেন। সবাই কী ভাবছেন, কীভাবে নিয়ম পরিবর্তন করা যায় সেগুলো নিয়ে পর্যালোচনা করে একটি সিদ্ধান্ত হতে পারে।
তবে শিক্ষার্থীরা মনে করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন একটি ইতিবাচক ও সময়োপযোগী সিদ্ধান্তই নেবেন। শিক্ষার্থীরা মনে করেন, বিবাহিত ছাত্রীদের উচ্চশিক্ষার প্রতিবন্ধকতার বিষয়টি বিবেচনা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নিয়মটি পরিবর্তন বা পরিমার্জন করবেন।
রোকেয়া হলের আবাসিক ছাত্রী জান্নাতুল লিজা বলেন, একজন বিবাহিত ছাত্রী ও অবিবাহিত ছাত্রীর মধ্যে অনেক তফাৎ রয়েছে। মেয়েদের উচ্চশিক্ষার প্রতিবন্ধকতা রয়েছে অনেক। সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত এখন নিয়মটিকে এমনভাবে পরিবর্তন করা যাতে একজন ছাত্রীর উচ্চশিক্ষা গ্রহণের রাস্তা মসৃণ হয়।
শামসুন নাহার হল সংসদের সাবেক সহসভাপতি (ভিপি) শেখ তাসনিম আফরোজ ইমি বলেন, যেহেতু আমাদের দাবিটি যৌক্তিক এবং লিখিতভাবে দাবি জানিয়েছি এই নিয়ম পরিবর্তনের জন্য। তাই আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদের এই যৌক্তিক দাবি মেনে নেবে।
ঢাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বলেন, আমরা মনে করি যে, নিয়মটি চালু রয়েছে তা নারীবিরোধী, আধুনিকতাবিরোধী এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হিসেবে তার যে পরিচয় রয়েছে সেটির জন্য অপমানজনক। সামাজিক বাস্তবতায় দেখি যে, বিবাহিত ছাত্রীরা উচ্চশিক্ষা গ্রহণে নানা ধরনের দুর্বিষহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়, সে ক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচিত আরও বেশি মনোযোগের সঙ্গে ছাত্রীদের সমস্যাগুলো মোকাবিলা করা। বরং আমরা দেখছি তার উল্টো। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছি এ ধরনের নিয়ম রাখা চলবে না এবং আশা করি প্রশাসন শিক্ষার্থীবান্ধব একটি ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবে।
ঢাবি ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. রকিবুল ইসলাম রাকিব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি ছাত্রী হলে বিবাহিত ছাত্রীদের হলে থাকার বিধিনিষেধের প্রচলিত নিয়মটির কারণে বিবাহিত ছাত্রীদের নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল এই বৈষম্যমূলক, অযৌক্তিক এবং অসাংবিধানিক বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোরালো দাবি জানাচ্ছে।
এ বিষয়ে সাধারণ ছাত্রীদের দাবির প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদল সংহতি এবং সমর্থন প্রকাশ করেছে। আমরা আশা করি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ নিয়মটি বাতিল করে সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত নেবে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান বলেন, মেয়েদের হলে কিছু নিয়মনীতি আছে যেগুলো যথাযথ সাংস্কৃতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ বিবেচনা করে প্রণীত। তারপরও সময়ের আবর্তনে কোথাও কোনো অসঙ্গতি আছে কি না সেগুলো পর্যালোচনা করে করে তা পরিবর্তন করতে হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana