শুক্রবার, ০৪ অক্টোবর ২০২৪, ০৮:৫৯ পূর্বাহ্ন

কেউ মনে রাখেনি

কেউ মনে রাখেনি

’৭১ এর রনাঙ্গনের এক বীর সাহসী অসম যোদ্ধা, যিনি বীরদর্পে লড়েছিলেন পাক হানাদারদের বিরুদ্ধে, ২নং সেক্টরের (সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর) সেক্টর কমান্ডার শহীদ কর্ণেল লে: এ.টি এম হায়দার (বীরউত্তম)। যিনি ছিলেন-পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ৩৬০ জন গেরিলা কমান্ডারের মধ্যে দুজন বাঙালী কমান্ডারের একজন ও পাকিস্তান স্পেশাল সার্ভিসেস বাহিনীর এক দক্ষ অফিসার। কিন্তু বাঙালীর মুক্তির আবেগ তাকে শৃঙ্খলবদ্ধ রাখতে পারেনি। ২৫শে মার্চের ক্র্যাক ডাউনের পর তিনি ব্রাহ্মমনবাড়ীয়ায় মেজর খালেদ মোজাফফরের চতুর্থ ইস্টবেঙ্গলের বিদ্রোহী দলের সাথে নিজ ব্যাটালিয়ান নিয়ে যুক্ত হন এবং ২নং সেক্টরে খালেদ মোশারফের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড হিসাবে নিযুক্ত হন। তখন খালেদ মোশারফের হেড কোয়ার্টার ছিল আগরতলার নিকটবর্তী ‘মেলাঘর’ নামে এক পাহাড়ী অঞ্চলে। সেখান থেকে দেশের গেরিলাযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেওয়া হতো। মেঘালয়ের ট্রেনিং প্রাপ্ত বীরমুক্তি যোদ্ধারের মধ্যে শহীদ রুমী, শহীদ বদি, অভিনেতা রাইসুল ইসলাম আসাদ, কাজী কামাল, রাজনীতিবিদ মোফাজ্জল হোসেন মায়া প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আর ঢাকা শহরে গেরিলা আক্রমনে যে দীক্ষা গেরিলা মুক্তি যোদ্ধাদের দেওয়া হয়-তার প্রধান প্রশিক্ষক ও সমন্বয়ক ছিলেন এ.টি.এম. হায়দার। তিনি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর এক দক্ষ বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ ছিলেন; মুক্তি যুদ্ধকালীন সময়ে পাক বাহিনীকে নাজেহাল করতে অনেক রাস্তাঘাট, রেলব্রীজ, স্থাপনা ডিনামাইট দিয়ে উড়িয়ে দিয়েছিলেন। খালেদ মোশারফ আগস্টের দিকে কপালে গুলিবিদ্ধ হলে সেপ্টেম্বর-ডিসেম্বর পর্যন্ত উনি সেক্টর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। ডিসেম্বরে মাঝামাঝিতে উনি গেরিলা প্লাটুন নিয়ে ডেমরা হয়ে ঢাকায় প্রবেশ করেন। তাই ১৬ই ডিসেম্বরে নিয়াজী আত্মসমর্পন অনুষ্ঠানে এ.কে. খন্দকার ব্যতীত একমাত্র সামরিক অফিসার হিসাবে এ.টি.এম হায়দার রেসকোর্সে উপস্থিত ছিলেন। শুধু তাই নয়, ১৭ই ডিসেম্বও সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে বেতার থেকে তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্য পাঠ করেন। ইথারে ভেসে উঠেছিল: ‘আমি মেজর হায়দার বলছি। প্রিয় দেশবাসী, আমাদের প্রিয় দেশকে মুক্ত করা হয়েছে। আপনারা সবাই এখন মুক্ত বাংলাদেশের নাগরিক।’ কিন্তু স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে সামরিক রাজনীতির পালাবদলে ১৯৭৬ সালে ৬ই নভেম্বর এই মহান মুক্তিযোদ্ধাকে মেজর জেনারেল খালেদ মোশারফ ও লে: কর্নেল নাজমুল হুদার সাথে অকাতরে- প্রতিপক্ষের আঘাতে মৃত্যু বরণ করতে হয়েছিল। উল্লেখ্য যে, উনার সহোদরা বোন ডা: সেতারা বেগম মুক্তিযুদ্ধের অসামান্য অবদানের জন্য বীরপ্রতীক উপাধিতে ভুষিত হন কিন্ত এই প্রজন্মের কেউ শহীদ লে: কর্নেল এ.টি.এম হায়দারকে তেমনভাবে মনে রাখেনি। আজও মেলেনি কোন রাষ্ট্রীয় পদক-পদবী।

 

মো: এনামুল হক মোল্লা
নিজস্ব প্রতিবেদক
একুশে টাইমস্ বিডিডটকম

Print Friendly, PDF & Email

নিউজটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করুন




© All rights reserved © 2021
Design By Rana