সোমবার, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ০৭:৩৪ অপরাহ্ন
তোমার ছেলেরা মরে গেছে প্রতিরোধের প্রথম পর্যায়ে,
তারপর গেছে তোমার পুত্রবধূদের হাতের মেহেদীর রঙ।
তারপর তোমার জন্ম সহোদর ভাই শেখ নাসের,
তারপর গেছেন তোমার প্রিয়তমা বাল্যবিবাহিতা পতনী, আমাদের নির্যাতিতা মা।
এরই ফাঁকে এক সময়ে ঝরে গেছে তোমার বাড়ির
সেই গরবিনী কাজের মেয়েটি, বকুল।
এরই ফাঁকে এক সময় প্রতিবাদে দেয়াল থেকে খসে পড়েছে রবীন্দ্রনাথের দরবেশ মার্কা ছবি।
এরই ফাঁকে এক সময় সংবিধানের পাতা থেকে মুছে গেছে দু’টি স্তম্ভ ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্র।
এরই ফাঁকে এক সময় তোমার গৃহের প্রহরীদের মধ্যে
মরেছে দু’জন প্রতিবাদী, ব্রিগেডিয়ার জামিল ও নাম না জানা এক তরুণ, যারা জীবনের বিনিময়ে তোমাকে বাঁচাতে চেয়েছিল।
তুমি কামান আর মৃত্যুর গর্জনে উঠে বসেছো বিছানায়, তোমার সেই কালো ফ্রেমের চশমা পরেছো চোখে,
লুঙ্গির উপর সাদা ফিনফিনে ৭ই মার্চের পাঞ্জাবি,
মুখে কালো পাইপ, তারপর হেঁটে গেছে বিভিন্ন কোঠায়।
সারি-সারি মৃতদেহগুলো তোমার কি তখন খুব অচেনা ঠেকেছিল?
তোমার রাসেল?
তোমার প্রিয়তমা পতœীর গুলিবিদ্ধ গ্রীবা?
তোমার মেহেদীমাখা পুত্রবধূদের মুজিবাশ্রিত করতল?রবীন্দ্রনাথের ভূলুণ্ঠিত ছবি?
তোমার সোনার বাংলা?
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামার আগে তুমি শেষ বারের মতো
পাপস্পর্শহীন সংবিধানের পাতা উল্টিয়েছো
বাংলাদেশের মানচিত্র থেকে এক মুঠো মাটি তুলে নিয়ে মেখেছো কপালে,
ঐতো তোমার কপালে আমাদের হয়ে পৃথিবীর দেয়া মাটির ফোঁটার শেষ তিলক, হয়ে!
তোমার পা একবারও টলে উঠলো না, চোখ কাঁপলো না।
তোমার বুক প্রসারিত হলো অভ্যুত্থানের গুলির অপচয় বন্ধ করতে,
কেননা তুমি তো জানো এক একটি গুলির মূল্য
একজন কৃষকের একবেলার অন্নের চেয়ে বেশি।
কেননা তুমি তো জানো, এক একটি গুলির মূল্য
একজন শ্রমিকের একবেলার সিনেমা দেখার আনন্দের চেয়ে বেশি।
মূল্যহীন শুধু তোমার জীবন, তোমার জীবন, পিতা।